রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে এমপি আনার খুন রহস্য

আনার ইস্যুতে উত্তপ্ত ঝিনাইদহ

দুই নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, পশ্চিমবঙ্গে সিয়াম জেল হেফাজতে

ঝিনাইদহ ও কলকাতা প্রতিনিধি

আনার ইস্যুতে উত্তপ্ত ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। দুই নেতার গ্রেফতারের বেশ কিছুদিন পার হলেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে দল ও দলের বাইরে। এ ছাড়া এমপি আনারকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের বাবাকে নিয়ে আর্তনাদ থামছে না। একের পর এক তার ভেরিফাইড পেজে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েই চলেছেন। গতকাল তিনি লিখেছেন, ‘বাবাকে ফিরিয়ে দিন, আমরা অনেক দূরে চলে যাব।’ এদিকে এমপি আনার হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সিয়াম হোসেনকে ১৩ দিনের বিভাগীয় হেফাজতের (জেল হেফাজত) নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের আদালত।

এমপি আনার হত্যা মামলায় গ্রেফতার কাজী কামাল আহমেদ বাবু ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে বাবু ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুর হয়ে ২ কোটি টাকায় এমপি আনার হত্যার জন্য শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ডিল করেন। গ্যাস বাবুর সঙ্গে মিন্টুর টাকা নিয়ে কোথায় কী হয়েছে এবং বাবুুর মোবাইল মিন্টু কোথায় ফেলেছেন তাও বলে দেন। এ ঘটনার পর ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে এমপি আনারের নির্বাচনি এলাকা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। তাদের জনপ্রিয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করে আসছে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি সফিকুল ইসলাম অপু জানান, হত্যার সঙ্গে জড়িত হওয়ার কথা আমরা শুনেছি এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ মোতাবেক চলে জেলা কমিটি। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) বি এম মোজাম্মেল হক জানান, একজন অভিযুক্ত হতেই পারে, তদন্তকারী সংস্থা বলুক তারা দোষী। সে সময় আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ডরিনের আবেগঘন স্ট্যাটাস : এমপি আনারকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের বাবাকে নিয়ে আর্তনাদ থামছে না। একের পর এক তার ফেরিফাইড পেজে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে চলেছেন। গতকাল তিনি লিখেছেন, ‘আব্বু প্রতি ঈদে তুমি ফজরের নামাজ পড়ে আমার রুমে এসে বলতে আম্মু কই তুমি? তোমার সালামি নিবে না? সালামির কথা বলে তুমি আমার বালিশের কাছে নতুন টাকা রেখে যেতে। কই আব্বু এই ঈদের দিনেতো এলে না আমার রুমে? আব্বু আমার কোনো কিছুই চাই না আর। আমার কিছুই লাগবে না আব্বু। আমি শুধু তোমাকে চাই। তুমি ফিরে আসো আব্বু আমাদের মাঝে। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে কখনোই কিছু আর চাইব না। তুমি শুধু আমার বাবাকে দিয়ে দাও আমাদের মাঝে। আব্বু আমি পারছি না তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমরা ভালো নেই আব্বু তোমাকে ছাড়া। তোমাকে খুব প্রয়োজন আব্বু। আব্বু তুমি চলে এসো। আব্বু তুমি চলে আসলে প্রয়োজন হলে আমরা আর রাজনীতি করব না। যারা তোমাকে হত্যা করে এমপি হতে চেয়েছে। তাদের ছেড়ে দিয়ে আমরা এই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ থেকে তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব আব্বু। তুমি চলে আসো আব্বু আমি আর পারছি না।’

১৩ দিনের জেল হেফাজতে সিয়াম : এমপি আনার হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সিয়াম হোসেনকে ১৩ দিনের বিভাগীয় হেফাজতের (জেল হেফাজত) নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের আদালত। গতকাল পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা ও দায়রা আদালতে আনা হয় অভিযুক্ত সিয়ামকে। আদালত ১৩ দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন সিয়ামকে। সে ক্ষেত্রে আগামী ৫ জুলাই ফের তাকে আদালতে তোলা হবে। ১৪ দিনের সিআইডি রিমান্ড শেষে শনিবার তাকে ফের আদালতে তোলা হলে এ নির্দেশ দেয়। এর আগে ৭ জুন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ থেকে সিয়ামকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। বাংলাদেশের ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিয়াম। তার পিতা আলাউদ্দিন বালি। ৩৩ বছর বয়সি সিয়াম ওই হত্যাকান্ডের পর থেকে বনগাঁ এলাকায় আত্মগোপন করেছিলেন বলে জানা যায়। আলোচিত এ হত্যাকান্ডে এখনো পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। যার মধ্যে অন্যতম সিয়াম হোসেন এবং অন্যজন জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ। প্রসঙ্গত, আনোয়ারুল আজিম আনার গত ১২ মে দর্শনা সীমান্ত হয়ে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়। আনার খুন হওয়ায় সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় কিছু হাড় এবং মাংসের টুকরো। এগুলো ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ টুকরোগুলো তার লাশের খন্ডিত অংশ কি না, তা নিশ্চিত হতে কলকাতায় যাচ্ছেন এমপি আনার কন্যা ডরিন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতে এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর