সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
কী পেল বাংলাদেশ

দুটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে

--- শমসের মবিন চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে গতানুগতিক সফর বলা যায় না। এখানে রাজনীতি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং ভূ-রাজনৈতিক দিক উঠে এসেছে। ভারত সরকার উপলব্ধি করতে পেরেছে বাংলাদেশকে এখন আর খালি হাতে ফেরত দেওয়া যাবে না। তাদের সব ন্যায্য চাহিদা পূরণ করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, তিস্তা পানি প্রকল্পে বাংলাদেশে একটি কারিগরি দল পাঠাবে ভারত। এই প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, প্রকল্প ব্যয় কেমন হবে, তা নিয়ে কাজ করবে এই কারিগরি দল। এটা কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে একটা নতুন বার্তা। অতীতে তারা বিভিন্ন অজুুহাতে এই ইস্যু নিয়ে কালক্ষেপণ করেছে। তবে এ সফরে ভারতের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে কিছু একটা বলা হয়েছে। এই প্রকল্পটা চীনের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। চীন এ প্রকল্পে কাজ করলেও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তবে ভারত এই প্রকল্প করলে পানিবণ্টনের বিষয়টা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। উভয়পক্ষের সিদ্ধান্তে প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য হলেও তা শেষ করতে কয়েক বছর সময় লাগবে। এ সময়েও তো আমাদের পানির প্রয়োজন হবে। অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টনের বিষয়টি যদি এ প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে সেটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো দলিলপত্রেও পানিবণ্টনের কথা উল্লেখ আছে। এটাকে বিরাট অর্জন বলা যায় না। তবে নিঃসন্দেহে এটা একটা অগ্রগতি। তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) চুক্তি। এটাও সময়সাপেক্ষ। এই চুক্তিতে অনেক জটিল বিষয় রয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রপ্তানি-আমদানি, ভারত থেকে অর্থায়ন করা প্রকল্প এসবের মধ্যে রয়েছে। ভারত যে ৮ বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিট দিয়েছে তার মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। এটার বাস্তবায়ন খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। এটাকে আরও সহজীকরণের কথা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। আশা করি ভারত এখন সেটা করবে। কারণ এটাকে তরান্বিত করতে সেপায় আলাপ-আলোচনা হবে। এ দুটি বিষয় হলো দ্বিপক্ষীয়। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বাংলাদেশকে ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যোগ করবেন। এটা একটা নতুনত্ব। এখানে একটা ভূ-রাজনীতি চলে এসেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সেভাবে পরিষ্কার ছিল না। এখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়তো একটা ইতিবাচক সংকেত দিয়েছেন যে, আমরা দ্বিপক্ষীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ইনিশিয়েটিভ নিয়ে কী কী করা যায় তা নিয়ে কাজ করব। বিষয়টা ভিন্ন মাত্রায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের ভূমিকা আরও বেশি থাকবে। কারণ এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ আরও অনেক দেশ জড়িত। কিন্তু চীন এটাকে কীভাবে দেখবে সে ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এমনকি তিস্তা প্রকল্পে ভারত যে কারিগরি দল পাঠাবে এটা চীন কীভাবে দেখবে সেটা আগামীতে বোঝা যাবে।

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গত ১২ জুন সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তা প্রকল্পে চীনের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি। ঠিক এর ১০ দিন পরই ভারতের পক্ষ থেকে কারিগরি দল পাঠানোর কথা বলা হলো। প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া সেই বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের এই সিদ্ধান্তের কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা খুঁজে বের করতে হবে। চীন দুটি জিনিস তাদের মাথায় রাখবে। একটি হলো- ভারত তাদের কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর দ্বিতীয়টি ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে। তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে ভারত এখন নড়েচড়ে বসেছে। যেহেতু চীনের কথা আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই উল্লেখ করেছেন। এর সঙ্গে রংপুরে নতুন সহকারী কমিশনের কার্যালয় চালুর কোনো সংযোগ রয়েছে কি না সেটা দেখতে হবে। কারণ তিস্তা প্রকল্প হবে রংপুরে। রাজশাহীতে ভারতের একটি ভিসা সেন্টার আছে। তা সত্ত্বেও রংপুরে সহকারী কমিশন স্থাপন করা হবে। এতে ভারতের ডিপ্লোমেটিক সুপ্রিম বাংলাদেশে আরও বিস্তৃতি পেল। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতে ছয়টি ডিপ্লোমেটিক মিশন কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, এই সফরে দুই দেশের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অস্ত্র উৎপাদন ও মান উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে ভারত থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা হবে। সব সময়ই এসব নিয়ে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত করা হয়। সিদ্ধান্তের ঘোষণাও দেওয়া হয়। তবে এগুলো বাস্তবায়নের গতিটা কেমন হবে সেটাই মূল বিষয়। এ ছাড়া মেডিকেল ই-ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই সফরের আরেকটি ইতিবাচক দিক বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর