বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিটির রাস্তা বন্ধ সচিব নিবাসে

দুই পাশে গেট নির্মাণ করে বন্ধ করেছে জনগণের রাস্তা ♦ ইস্কাটন গার্ডেন রোড থেকে পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে যাওয়া বন্ধ তিন বছর ♦ ভোগান্তি বেড়েছে প্রতিদিন যাতায়াত করা হাজারো মানুষের ♦ সিটি করপোরেশন বলছে এটা তারা পারে না ♦ সচিব নিবাস অ্যাসোসিয়েশন বলছে এটি তাদের নিজস্ব সড়ক

ওয়াজেদ হীরা ও হাসান ইমন

সিটির রাস্তা বন্ধ সচিব নিবাসে

রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় সচিবদের বসবাসের জন্য তৈরি করা সচিব নিবাসের সামনে থাকা সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশনের একটি রাস্তা তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সচিবদের নিরাপত্তা ও বাসা থেকে বের হওয়ার সময় যানজট সৃষ্টি হয় এমন অজুহাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের চলাচলের সরকারি রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সচিবদের  কিছু বলতেও পারছে না সিটি করপোরেশন। ফলে  প্রতিদিন যাতায়াত করা হাজারো মানুষ নিত্য ভোগান্তি পোহাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের এমন কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে বিস্মিত ওই এলাকার সাধারণ মানুষও। আশপাশে আরও কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোয়ার্টার থাকলেও সচিব নিবাসে বসবাস ব্যতীত অন্য কেউ ওই সড়ক ব্যবহার করতে পারে না। অনেক সরকারি কর্মকর্তারাও বিরক্ত। ২৭০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর পুরাতন ইস্কাটন রোডে সচিব নিবাস নির্মাণ করে সরকার। যা ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। তিনটি ভবনে মোট ১১৪ ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব ফ্ল্যাটে সিনিয়র সচিব, সচিব ও গ্রেড-১ এর কর্মকর্তারা বসবাস করেন। তবে কিছু অতিরিক্ত সচিবও বসবাস করছেন। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোড এবং পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডের মাঝে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের উল্টোপাশে তৈরি করা হয়েছে সচিব নিবাস। সচিব নিবাসের সঙ্গে পূর্ব পাশে রয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের সড়ক থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও সচিব নিবাসের মাঝ দিয়ে যাওয়ার একমুখী সড়কটি তিন বছরের বেশি সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড (সবজি বাগান সড়ক) থেকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের পশ্চিম পাশ দিয়ে আরেকটি একমুখী রাস্তা রয়েছে, যা দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন সাধারণ মানুষ। এতে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। দুটি গাড়ি চলাচল করার  মতো পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ওই পথ নিত্য ব্যবহারকারীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সড়কটি কেন বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে সচিব নিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাবেক সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য ফয়েজ আহম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই  সড়কটি ছিল না। এই আবাসন ভবন করার পর করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ হেঁটে চলতে পারে, তবে গাড়ি চলাচল বন্ধ। ১১৪টা আবাসন রয়েছে। প্রতিমুহূর্তে গাড়ি আসা-যাওয়া করে। এর মধ্যে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে সচিব নিবাস ক্যাম্পাসে। এ রাস্তা আগেও ছিল উল্লেখ করলে তিনি বলেন, পূর্বে এখানে টেনামেন্ট হাউস ছিল। তখন এখানে একটি ছোট সরু রাস্তা ছিল। মূলত নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনার শুরুর কয়েক মাস পর থেকে এ সড়কটি একেবারে বন্ধ রয়েছে। এর আগে নির্মাণাধীন দেখিয়ে চলাচল সীমিত করা হয়। পরে দুই পাশে গেট তৈরি করে পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গেটের পাশে তৈরি করা হয়েছে সিকিউরিটি গার্ড রুম। সরেজমিনে ঘুরে এবং আশপাশের  স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব সময় সচিব নিবাসের উত্তর পাশের গেট বন্ধ থাকে। নিজেদের প্রয়োজন ছাড়া একেবারেই খোলা হয় না। দক্ষিণের গেট দিয়ে যাতায়াত বেশি করা হয়। আর সাধারণ মানুষ হেঁটে মাঝে-মধ্যে যাতায়াত করতে পারলেও প্রায় সময় আনসার সদস্যরা তাতেও বাধা দেন। অথচ এই সড়ক বন্ধ না করলেও সচিব নিবাস থেকে বের হতে আরও দুটি নিজস্ব গেট রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, বহুদিনের পুরনো একটি সড়ক সরকারি কর্মকর্তারা গিলে খেয়েছে। জানতে চাইলে ডিএসসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল বাশার বলেন, এ সড়কটি ৫-৬ বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। প্রথমে সচিব নিবাসের পক্ষ থেকে সড়কটি প্রশস্ত করে সংস্কার করা হয়েছে। তখন মনে করা হয়েছিল তারা সংস্কার করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন। কিন্তু পরে সচিব নিবাস কর্তৃপক্ষ গেট নির্মাণ করে সড়কটি বন্ধ করে দেয়। কী কারণে বন্ধ করেছে সেটা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে পুরাতন এলিফ্যান্ট সড়কের মধ্যকার সংযোগ সড়ক কী কারণে বন্ধ রয়েছে সেটা আমার জানা নেই। ট্রাফিক বিভাগ বলতে পারবে কেন এটা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাস্তাটি বন্ধ রাখতে সচিব নিবাস থেকে সিটি করপোরেশনকে মৌখিক বা চিঠি দিয়ে অনুমতি নিয়েছে বলেও আমার জানা নেই।

সর্বশেষ খবর