শিরোনাম
শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৃত্যুও আলাদা করতে পারেনি দুই বন্ধুকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে অগ্নিকান্ডে নিহত তিনজনের মধ্যে শাহেদ ও ইকবাল দুই বন্ধু। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে থাকা শাহেদ-ইকবালকে আলাদা করতে পারেনি মৃত্যুও। জানা যায়, নিহত মো. শাহেদ ও মো. ইকবালের গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল কুতুবপাড়ায়। ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। এরই মধ্যে শাহেদ চট্টগ্রামে এসে চাকরি নেন রিয়াজউদ্দিন বাজারের  মোহাম্মদীয়া মার্র্কেটের আজওয়ার টেলিকমে। বন্ধুত্বের টানে ইকবালও চলে আসেন শহরে। তার কর্মস্থল শহরের অন্য জায়গায় হলেও শুক্রবার ছুটির দিন বন্ধুর সঙ্গে কাটানোর জন্য চলে আসেন নিয়মিত শাহেদের কাছে। তেমনি বৃহস্পতিবার রাতেও দুই বন্ধু একত্র হন ছুটির দিন আনন্দে একসঙ্গে কাটানোর জন্য। কিন্তু কে জানত এ দেখা শেষ দেখা তাদের। ভয়াবহ আগুনে মৃত্যুপথের যাত্রী হতে হবে দুই বন্ধুকে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুন মুহূর্তেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো মার্কেট। এ সময় কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে শাহেদ ফোন করেন দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়াকে। তখন সময় রাত পৌনে ২টা। ফোন পেয়েই দোকান মালিক শাহেদকে নির্দেশনা দেন তিনি যেন সিঁড়ি বেয়ে ছাদের ওপরে উঠে যান। কিন্তু ধোঁয়ায় চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যায় শাহেদের। সব দিকে অন্ধকার। পরে আবারও ফোন দেন শাহেদ। তখন সাজ্জাদ পরামর্শ দেন চোখে মুখে কাপড় মুড়িয়ে হলেও যেন ছাদে দৌড়ে চলে যান। কিন্তু নিরুপায় শাহেদ। নিজেকে বাঁচাতে হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজে নেন টয়লেট। সেখান থেকে মালিককে ফোন দিয়ে জানান, ‘আমি টয়লেটে। আমার জন্য দোয়া করবেন’। কলমা পড়তে পড়তে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন শাহেদ। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়ায় চলে গিয়েছিলেন দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়া। আগুন লাগার খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে ছুটে আসেন রিয়াজউদ্দিন বাজারে। ততক্ষণে সব শেষ। ধোঁয়ার কারণে ভিতরে ঢুকতে পারেননি সাজ্জাদ মিয়া। অন্য ভবনের দ্বিতীয় তলা দিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করেন তিনি। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখেন টয়লেটে পড়ে আছে শাহেদের নিথর দেহ। সেখান চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহেদের ভাই আল আমিন বলেন, ‘আমার ভাই আগুন দেখে নিচে আসার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে নামতে পারেনি। বাঁচার জন্য একটা টয়লেটে ঢোকে। শেষ পর্যন্ত সেখানেই দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। ফায়ার সার্ভিস যদি ঠিকভাবে আগুন নেভানোর কাজ করতে পারত, তাহলে আমার ভাইয়ের কিছু হতো না।’

সর্বশেষ খবর