শিরোনাম
শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে বগুড়ার সেই কারাভবন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল জলেশ্ব¦রীতলা এবং মালতীনগর এলাকার করতোয়া নদীর পাড়ে ১৮৮৩ সালে আবাসিকসহ প্রায় ১৫ একর জমির ওপর নির্মিত হয় বগুড়া জেলা কারাভবন। তখন থেকেই বগুড়া জেলা কারাগারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালু হয়। পুরো কারাগারটি ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়েছে। কারাভবনের অবকাঠামো এতটাই দুর্বল, যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে! ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ১৯১ বছরের পুরনো এই কারাভবন নির্মাণে চুন ও সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় চারটি কনডেম সেলের ছাদ চুন ও সুরকির তৈরি। এ কনডেম সেলগুলোর কার্যক্ষমতা কমে গেছে। যে কারণে সহজেই ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর সুযোগ পেয়েছে। এদিকে কয়েকবার কারাগারটি মূল শহর থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়ার দাবি তুললেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

কীভাবে ছাদ ফুটো করে কয়েদিরা পালাল এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা  জেলাজুড়ে। যদিও পুলিশ গ্রেফতার ফাঁসির আসামিদের কাছ থেকে একটি ৪ দশমিক তিন ইঞ্চি লম্বা স্টিলের পাত, একটি প্যাঁচানো প্লাস্টিকের রশি, একটি ৭ ইঞ্চি লম্বা স্ক্রু ডাইভার জব্দ করা হয়েছে। এই স্টিলের পাত ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে কৌশলে এক মাস ধরে পর্যায়ক্রমে ছাদ কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করে পালিয়ে যায় আসামিরা। তবে এসব দিয়ে সেলের ছাদ কেটে পালানো সম্ভব কি না তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

বগুড়া কারাগার সূত্রে জানা যায়, কারাগারের ৪টি সেলের ছাদের একই অবস্থা। অপর তিনটি সেলে রয়েছে ভয়ংকর জঙ্গিসহ ফাঁসির আরও আসামি। তাই তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বগুড়া কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র ৭০০ জন। বর্তমানে বন্দি রয়েছে ২ হাজার ২০০ জন। হাজতি ও কয়েদিদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে কারাগার থেকে আর কোনো আসামি যাতে পালাতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা বাড়ানোসহ সার্বিক বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে জনবল বাড়ানো হয়েছে ২৮ জন। সেই সঙ্গে কারাগারের দেয়ালের বাইরে ২৪ ঘণ্টা ১২ জন কারারক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন।

বুধবার ভোর রাতে কারাগারের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই চার আসামিকে গ্রেফতারও করেছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কয়েদিরা হলেন- স্কুলছাত্র নাঈম হত্যা মামলার আসামি জেলার কাহালু পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা আবদুল মান্নানের  ছেলে জাকারিয়া (৩১), কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গার নজরুল ইসলাম মজনু, নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দির আমির হোসেন এবং বগুড়ার কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়ার ফরিদ শেখ। এরা চারজনই ছিলেন ভয়ংকর খুনি।

এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামান ও প্রধান কারারক্ষীসহ মোট পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অপর তিনজন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও ডিআইজি প্রিজনের গঠিত পৃথক কমিটি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। শুরুতেই প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব অবহেলায় কারণে এই আটজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাময়িক বরখাস্তদের মধ্যে ডেপুটি জেলার ছাড়াও সর্ব প্রধান কারারক্ষী ফরিদ উদ্দিন, প্রধান দুই কারারক্ষী দুলাল মিয়া ও আবদুল মতিন এবং কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম রয়েছেন। এ ছাড়া বিভাগীয় মামলা হয়েছে প্রধান কারারক্ষী আমিনুল ইসলাম, সহকারী প্রধান কারারক্ষী সাইদুর রহমান ও কারারক্ষী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। এদিকে কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালানোর ঘটনায় বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে ঝুঁকি দেখা দেয়। এ কারণে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি, জঙ্গি মামলায় অভিযুক্ত জেএমবির আসামিদের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারসহ পাশের জেলার বিভিন্ন কারাগারে আসামি সরানোর কাজ চলে। এদের মধ্যে প্রথম ধাপে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন কয়েদিসহ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ আসামিকে রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নাঈম মন্ডল, শিবলু ফকির ও আবদুর রাজ্জাক। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই কয়েদি হলেন রবিউল ইসলাম ও আবদুর রহিম। এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বগুড়া কারাগার চত্বর পরিদর্শন করে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বগুড়া জেলা কারাগার ভবনটি অনেক পুরনো। এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভবনের অনেক স্থান নাজুক।

সর্বশেষ খবর