শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংসদে অর্থবিল পাস

১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ♦ এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার ♦ খাদ্য নিরাপত্তায় ১৭ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদে অর্থবিল পাস

১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখে সর্বসম্মতিক্রমে অর্থবিল- ২০২৪ পাস করেছে জাতীয় সংসদ। একই সঙ্গে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই আইন সংশোধন করা হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী খাদ্য নিরাপত্তায় বাজেটে ১৭ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখার বিধান যুক্ত হয়েছে বিলে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের চলমান বাজেট অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে অর্থবিল-২০২৪ সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। বিল ওপর আনীত জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবনার ওপর আলোচনায় অংশ নেন মো. হামিদুল হক খন্দকার, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, পংকজ নাথ, খান আহমেদ শুভ, আবুল কালাম, মো. আহসানুল হক চৌধুরী প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী অর্থবিলের ওপর আনীত কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বাকি প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিলে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু অর্থ বছরের জন্য আর্থিক বিধান, বিদ্যমান কতিপয় আইন সংশোধনসহ কর প্রস্তাবসমূহ অনুমোদন করা হয়েছে। বিলের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সমাপনী বক্তব্যের পর বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করা হয়।  বিলের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৭ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটে। এ ছাড়া কৃষি খাতে সব ধরনের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য কৃষি গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমিষের অভাব পূরণে মাছ-মাংসের উৎপাদন বাড়ানো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সমাজের পিছিয়ে পড়া সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ১১৫টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ সময় তিনি সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিভিন্ন সুবিধার দিক তুলে ধরেন। 

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন সম্পত্তির দাম অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকায় যার এক কাঠা জমি আছে তিনিও কোটি টাকার মালিক। কিন্তু আয়কর আইনের কিছু বিধিবিধানের কারণে অপ্রদর্শিত অর্থ বা আয় কালো টাকা হয়ে যাচ্ছে। এ সংকট উত্তরণে কয়েক বছর পরপর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এর আগে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও কালো টাকা সাদা করেছেন।  বিলটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের বলেন, কালো টাকা সাদা করা যেতে পারে তবে সেখানে ৫০ শতাংশ করারোপ করা যেতে পারে। তবে সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিরতায় শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকসুদের হার বাজারভিত্তিক ও নীতি সুদহার প্রবর্তন করা হয়েছে। ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখতে ক্রলিংপেগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত ১১টি পদক্ষেপ পূরণে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সব সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হলে ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলার। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। খাদ্য নিরাপত্তায় টিসিবির মাধ্যমে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ওএমএস কার্যক্রম চালু রাখা ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার শিরোনামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর