শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

আপস করতে বাধ্য হলেন লালন অনুসারী বৃদ্ধা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

এলাকাবাসীর বাধা এবং প্রশাসনের মধ্যস্ততায় আপস করতে বাধ্য হলেন আধ্যাত্মিক সাধক লালন সাঁইজির অনুসারী মৃত গাজির উদ্দিন ফকিরের স্ত্রী বৃদ্ধা চায়না বেগম। ভেঙে ফেলা ঘর স্বামীর কবরের সঙ্গে তুলতে পারবেন না। তারই ছেলের বাড়ির সঙ্গে গ্রামবাসী ঘর তুলে দেবেন তাদের খরচে। এটুকু নিয়েই সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে হচ্ছে বৃদ্ধাকে। গতকাল সকালে এ বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় বৃদ্ধার করা অভিযোগের আসামি সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এনামুল হকের বাড়িতে। সভা শেষে বৃদ্ধার               ভাই আয়াত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কেউ নেই। গ্রামবাসী একাট্টা হয়ে আমার বোনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তারা ঘর তুলে দেবে অন্য জায়গায়। কিন্তু আমার বোনের শেষ ইচ্ছে ছিল স্বামীর কবরের পাশে বাকি দিনগুলো কাটানোর।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেম্বার এনামুল হক বলেন, সবই কুষ্টিয়া মডেল থানা থেকে শুক্রবার বিকালে ফয়সালা করে দেওয়া হয়েছে। আমরা থানার সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বসেছিলাম। বাউল পক্ষ, গ্রামের মাতব্বর এবং গ্রামবাসীর সামনে প্রকাশ্যে কথাবার্তা হয়েছে। সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে বাউল পক্ষ। এনামুল হক জানান, যেহেতু ওই বৃদ্ধা যেখানে ঘর নির্মাণ করেছিলেন, সেখানে যাতায়াতের রাস্তা নেই। তা ছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আপত্তি রয়েছে। তাই তার ছেলেদের ঘরের পাশে ভাঙা ঘরটি নতুন করে নির্মাণের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এজন্য যা খরচ হবে তা গ্রামবাসী বহন করবে। এ ছাড়া ওই বৃদ্ধা যেন সচ্ছলভাবে চলতে পারেন, তাই তার পরিবারের সদস্যরা এককালীন কিছু টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দেবেন। পরে ভাই আয়াত আলীর মোবাইল ফোনে কথা হয় বৃদ্ধা চায়না বেগমের সঙ্গে। পাশ থেকে শিখিয়ে দেওয়া কথায় তিনি ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকার কথা বলেন।  গ্রামের মাঠে নির্জন স্থানে স্বামী গাজির উদ্দিন ফকিরের কবরের সঙ্গে দুই সপ্তাহ আগে ঘর তোলেন স্ত্রী ফকির চায়না বেগম।  গত বুধবার সকাল ৬টার দিকে গ্রামের কিছু মুসল্লি তার ঘরটি ভাঙচুর করেন। এতে তার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। এ ছাড়া, তারা চায়না বেগমকে হত্যার হুমকি দেন। পরে ওই ঘটনায় কুষ্টিয়া সদর থানায় চায়না বেগম অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য এনামুল হক, মাতব্বর মোশারফ হোসেন, আনার মন্ডল ও সাইদুল হাজির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪৫-৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। উল্লেখ্য, আধ্যাত্মিক সাধক লালন সাঁইজির অনুসারী মৃত গাজির উদ্দিন ফকিরের স্ত্রী চায়না বেগম চেয়েছিলেন জীবনের শেষ দিনগুলো স্বামীর কবরে মাথা ঠেকিয়ে কাটিয়ে দেবেন। ভিটেমাটিতে প্রতিদিন জ্বালাবেন সন্ধ্যা প্রদীপ। ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। এলাকার মসজিদে মাইকিং করে ভেঙে দেওয়া হয় তার ঘর। বৃদ্ধা জানান, ‘তার স্বামী মারা যাওয়ার আগে বলেছিলেন, কোথাও জায়গা না হলে তুমি আমার কবরের পাশেই থাকবা। প্রতি বছর বাতাসার সিন্নি হলেও করবা। ’

সর্বশেষ খবর