সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

রায়ের অনুলিপি পাওয়ার অপেক্ষা

আরাফাত মুন্না

রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১ জুলাই। দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলা নৃশংস এ ঘটনায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দেন বিচারিক আদালত। তবে হাই কোর্টে এসে সাজা কমে যায় সাত জঙ্গির। মৃত্যুদন্ড থেকে কমিয়ে তাদের আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় দেন হাই কোর্ট। এদিকে রায় ঘোষণার আট মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি না পাওয়ায় এখনো আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের অনুলিপির অপেক্ষায় রয়েছে আসামিপক্ষও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাই কোর্টের রায়ের অনুলিপি পেলে বুঝতে পারব কোন কোন যুক্তিতে আসামিদের মৃত্যুদন্ড থেকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। রায়টি পেলে পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে হাই কোর্ট আসামিদের আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন। তাই তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে। বের হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং হাই কোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল বিভাগে বিবিধ আবেদন করার প্রয়োজন নেই। যদি আপিল করা হয়, সেই আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করবে কি না, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায়টা আগে বের হোক। আমরা দেখে নিই। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, মৃত্যুদন্ড বহাল রাখাটাই আমি মনে করি ওদের জন্য যথার্থ ছিল। কারণ ওদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ ওরা কতগুলো বিদেশি নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যারা আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ধর্মের নামে, উগ্রবাদিতার নামে তাদের হত্যা করেছে। এ দন্ডিতরাই পেছনে থেকে মদত দিয়েছে, পরিকল্পনা করেছে। তাই আমি মনে করি ওদের প্রতি বিন্দুমাত্র অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল এহসান জুবায়ের বলেন, হাই কোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার অপেক্ষা করছি। অনুলিপি পেলে মোয়াক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। হোলি আর্টিজান বেকারিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই। আট বছর আগের এ হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল নামের পাঁচ তরুণ জঙ্গি ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ আগে পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়েছিল হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। জবাই করে, গুলি চালিয়ে তারা ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ হারান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে সেখানে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। ওই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার রায় হয় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান নব্য জেএমবির এই সাত সদস্যকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন। প্রাণদন্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। এ ছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড। বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিলে, সে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। এজন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে বিচারিক আদালতের রায়ের পর মামলার যাবতীয় নথি হাই কোর্টে পাঠাতে হয়; যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট এ মামলার নথি আসে হাই কোর্টে। পরে দন্ডিতরাও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল ও জেল আপিল করে। গত বছর শুরুর দিকে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল-জেল আপিলে শুনানি শুরু হয়। শেষ হয় গত বছর ১১ অক্টোবর। পরে ৩০ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন হাই কোর্ট। রায়ে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে সাত জঙ্গিকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেন হাই কোর্ট। দন্ডিতরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আবদুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। উচ্চ আদালত রায়ে বলেন, দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া এ নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডটি জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে।

সর্বশেষ খবর