মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে এমপি আনার খুন রহস্য

শাহিনের বাসায় মদের কারখানা

গ্যাস বাবু ফের কাশিমপুর কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাহিনের বাসায় মদের কারখানা

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহিনের ভাটারা এলাকার বাসায় মদের কারখানার সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল বেলা ৪টার দিকে গ্রেফতার ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরকে নিয়ে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরের পাসপোর্ট এবং বিপুল পরিমাণ মদ তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, শাহিনের বাসায় দ্বিতীয় তলায় মদ তৈরির মিনি কারখানা ছিল।

মামলার অন্যতম আসামি কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল সকালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। ঝিনাইদহ কারাগারের জেলার মহিউদ্দিন হায়দার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, রিমান্ডে থাকা মোস্তাফিজ ও ফয়সল জানিয়েছিলেন, কলকাতা এবং ঢাকা দুই জায়গায়ই তারা শাহিনের বাসায় অবস্থান করেছেন। তাদের পাসপোর্টও শাহিনের বাসায় রাখা ছিল। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ফয়সল ও মোস্তাফিজ তাদের পাসপোর্ট আক্তারুজ্জামান শাহিনের বাসায় রেখেছে বলে জানিয়েছিল। এজন্যই আমরা শাহিনের বাসায় অভিযান চালিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা সেখানে মদের একটা কারখানার সন্ধান পাই। ওই বাসা থেকে দুটি পাসপোর্টই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের জেলার মহিউদ্দীন হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছয় দিন পর কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে পুনরায় কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে, গত ২৫ জুন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঝিনাইদহ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। গত ২৬ জুন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহে নেওয়া হয়। পরে তাকে নিয়ে জেলা শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় গাঙ্গুলি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের উত্তর দিকের একটি পুকুর এবং স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকে প্রাচীর সংলগ্ন পুকুরে মোবাইল উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। তবে মোবাইল ৩টির একটিও উদ্ধার হয়নি বলে জানা গেছে। এর আগে, গ্যাসবাবু নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তার ৩টি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে বলে স্ট্যাটাস দেন। পরে তিনি সদর থানায় মোবাইল হারিয়ে গেছে বলে জিডিও করেন। এর ঠিক দুই দিন পর ঝিনাইদহ শহরের নিজ বাড়ি থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে শহরের আদর্শপাড়া থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তদন্তের স্বার্থে তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এমপি আনার হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। তিনি তার ৩টি মোবাইল ঝিনাইদহ শহরের দুটি পুকুরে ফেলে দিয়েছেন বলে জানান।

ভারতে যাওয়ার চিঠি পাননি ডরিন : ভারতে যাওয়ার চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন এমপিকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি বলেন, যেহেতু দুই দেশের ব্যাপার এখানে একটু দেরি হতেই পারে। তাছাড়া নিরাপত্তাও একটা ব্যাপার আছে। ডিবি পুলিশ যে সময় আমাদের যেতে বলবে সে সময়ে আমরা যেতে প্রস্তুত আছি। এ জন্য আমার এবং ছোট চাচা এনামুল হকের ভারতের ভিসা করেছি।

গ্রেফতারকৃতদের শাস্তি-বহিষ্কারের দাবি : ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারকৃতদের কঠিন শাস্তি এবং জড়িত দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে দ্রুত বহিষ্কার চায় তার পরিবার এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্র্মীরা। এ জন্য তারা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। তবে বসে নেই মিন্টুপন্থিরা। তারাও মিন্টু গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। চলছে দুই পন্থিদের পাল্টাপাল্টি কথা চালাচালি। সে কারণে ঝিনাইদহ রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। এ ব্যাপারে আনারের ঘনিষ্ঠ কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ জানান, আমরা কারও নামে কোনো অভিযোগ করিনি। ডিবি পুলিশ তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতার করেছে। আমরা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করে আসছি। আর যেহেতু হত্যা মামলার সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা জড়িত। আমরা মনে করি তারা পদে থাকার অধিকার হারিয়েছে। তাই অবিলম্বে তাদের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর