মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই শিশুর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া নিয়ে তোলপাড়

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে শনিবার দুপুরে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা যায় প্রলয় দাস (৭) ও সূর্য দাস (৬) নামে দুই শিশু। পরে গ্রামের শ্মশানের পার্শ্ববর্তী স্থানে তাদের মাটিচাপা দেওয়া হলে গ্রাম্য পঞ্চায়েতের তোপের মুখে পড়ে নিহতদের পরিবার। শেষ পর্যন্ত তাদের লাশ মাটির নিচ থেকে তুলে কালনী কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়। যা নিয়ে রবিবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সবখানে তোলপাড় শুরু হয়। প্রলয় দাস ওই গ্রামের গোবিন্দ দাসের এবং সূর্য দাস রুবেল দাসের ছেলে। প্রলয় দাসের বাবা গোবিন্দ দাস বলেন, শনিবার দুপুরে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে আমার সাত বছরের ছেলে প্রলয় এবং প্রতিবেশী রুবেল দাসের ছয় বছর বয়সী ছেলে সূর্য দাস পানিতে ডুবে মারা যায়। রবিবার বেলা সাড়ে ৩টায় আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশ্মশানের দেয়ালের কাছে মাটির নিচে সমাহিত করি। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ গ্রামের মুরব্বিরা আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছি। এতে তারা তা কর্ণপাত করেনি। অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে ছেলের লাশ তুলে নদীতে বস্তাবন্দি করে ভাসিয়ে দিই। অপর শিশুর বাবা রুবেল দাস বলেন, শ্মশানে গোবিন্দ দাসের ছেলের লাশ সমাধিতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানার পর বাধ্য হয়ে সূর্যের লাশ কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি। এখন আমার ছেলের লাশ মাছে, শিয়ালে খাবে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ প্রসঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ সরকার বলেন, ‘এটি আমার একার নয়, গ্রাম কমিটির সিদ্ধান্ত। কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, গ্রামের কমিটির সিদ্ধান্ত হলো শ্মশানের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে পাশে কারও সমাধি দেওয়া যাবে না।’ বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। শ্মশান তো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাহিত করা হলে শ্মশানের পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে? হবিগঞ্জ জেলা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জুল সোহেল বলেন, দুই শিশুর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া বর্বরোচিত ঘটনা। লাশ সমাধিস্থ করা হয়েছে, তারপরও তার বাবাকে বাধ্য করে নদীতে সেটি ভাসিয়ে দেওয়া ভয়াবহ বর্বরোচিত ঘটনা। যারা এ কাজটি করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, ঘটনাটি তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনাটিকে অমানবিক মনে করেন হবিগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সি কেউ মারা গেলে লাশ অপবিত্র ভেবে সৎকার না করে সমাধি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুসারে তাদেরও শ্মশানের পাশে সমাধি দেওয়ার কথা। তবে বাস্তবে দুই শিশুর পরিবারের প্রতি অমানবিক কাজ করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ায় পরিবেশ বিনষ্ট হবে।

সর্বশেষ খবর