বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভাঙনের শঙ্কায় নির্ঘুম রাত

বন্যার কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি

প্রতিদিন ডেস্ক

ভাঙনের শঙ্কায় নির্ঘুম রাত

কুড়িগ্রামে তলিয়েছে ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারা দেশের কোথায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, আবার কোথাও উন্নতির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কিছু কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পাশাপাশি বন্যা রক্ষা বাঁধ ও সড়ক ভাঙনের তথ্য পাওয়া গেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

রংপুর : বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলো প্লাবিত হয়েছে। জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে তিস্তার তীব্র স্রোতে নদী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল গঙ্গাচড়া উপজেলায় ২০টি ঘরবাড়ি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ডুবে গেছে বাদাম, পাটসহ শাক-সবজির ফসলি জমি। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়ার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নোহালীর চরে তিনটি, মর্ণেয়ার তালপট্টিতে ৯টি বাড়ি, ভাঙ্গাগড়ায় তিনটি এবং কোলকোন্দের চিলাখালে চারটিসহ নদীর তীরবর্তী চরের ২০টিরও বেশি বসতভিটা তিস্তার তীব্র ¯্রােতে ভেঙে গেছে।

লালমনিরহাট : ভারতের উত্তর সিকিমে বৃষ্টির কারণে দেশের উজানে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় এ বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। টানা বৃষ্টি আর উজানের পানিতে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে তিস্তাপাড়ের চর ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি গত দুই দিন ধরে বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। ইতোমধ্যেই জেলার পাঁচটি উপজেলার নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম : ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হু হু করে বেড়ে  বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ফলে এসব নদনদীর অববাহিকায় দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরের ভিতর মাচা বেঁধে নদের চরের মানুষজন দিনযাপন করছেন। গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সবগুলো নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঘাঘট, করতোয়া ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব নদনদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। পাবনা : পাবনার বেড়ায় যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের শত শত বিঘা বাদাম খেত তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বাদামচাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তলিয়ে যাওয়া বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। আবার কোনো কোনো স্থানে চাষিরা তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আধা-পাকা বাদামও তুলে ফেলছেন। এতে সব মিলিয়ে বাদাম চাষে মারাত্মক লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। দিনাজপুর : উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দিনাজপুরের বিভিন্ন নদনদী প্লাবিত হয়েছে। একটি নদীর পানি বিপৎসীমা পার হলেও অন্য নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। গতকাল জেলার খানসামায় করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে দিনাজপুর শহর ও আশপাশে টানা বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাঘাটে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নেমে এসেছে দুর্ভোগ। সিলেট : সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় কমেছে বন্যা আক্রান্ত এবং আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষের সংখ্যা। এ ছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা ছাড়া সব নদনদীর পানি নেমেছে বিপৎসীমার নিচে। গত দুই দিন সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নে নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ১১টি স্থান ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সুনামগঞ্জ : দোয়ারাবাজার উপজলায় বানের পানির তোড়ে সুরমা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ মা-মেয়েসহ তিন জনের সন্ধান মেলেনি। তাদের বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে শেষ দেখার জন্য অশ্রুসিক্ত চোখে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন সুরমা নদী পারাপারের সময় ডিঙি নৌকা ডুবে নিখোঁজ হন তারা। এদিকে ভারী বর্ষণ বন্ধ আর ভারতের ঢলের তীব্রতা কমায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম কাটছে চরাঞ্চলসহ ভাঙনকবলিতদের। নেত্রকোনা : জেলার কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও অর্ধশতাধিক গ্রামে জলাবদ্ধতা রয়েছে। বেশ কিছু নিচু এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় গেল কদিন ধরেই। ফেনী : ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বাঁধভাঙা এলাকা থেকে পানি অনেকটা সরে গেলেও নতুন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পাঁচটি স্থানের বাঁধ ভেঙে সোমবার রাতে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। নতুন করে ফুলগাজীর নিলক্ষী, গোসাইপুর, করইয়া, নোয়াপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামের মালিপাথর এলাকার শালধরে নদীর ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে এখনো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। খাগড়াছড়ি : জেলার মেরুং ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। এ ছাড়া কবাখালি ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের পানি এখনো নামেনি।   দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেড কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার।

সর্বশেষ খবর