বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্নীতির ঢাকঢোলের মধ্যে বৈঠকে বসছেন সচিবরা

ওয়াজেদ হীরা

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতির নানা ঢাকঢোলের মধ্যে সব সচিবকে নিয়ে ‘সচিব সভা’ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে আজ বিকাল সাড়ে চারটায় সচিবালয়ে  মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি সাবেক পুলিশপ্রধান, সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক ডিএমপি কমিশনার, এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্নীতির নানামুখী আলোচনার মধ্যে এ বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ বলে মনে করছেন সচিবরা।

একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সচিব সভার আলোচ্যসূচিতে চারটি মূল বিষয় রয়েছে। এর বাইরেও বিবিধ আলোচনায় আরও কয়েকটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত সচিব সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, শুদ্ধাচার ও সুশাসন, নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন ও বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে মূল আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। আজকের সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভিন্ন দফতরে কর্মরত সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবের মধ্যে আটজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদকের। তাদের বেশির ভাগই মনে করছেন, দুর্নীতি নিয়ে যখন সারা দেশে শোরগোল হচ্ছে তখন সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিশেষ কোনো মেসেজ হয়তো সবাইকে দেবেন। পাশাপাশি নিজ নিজ মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দফতরের দিকে চোখ কান খোলা রেখে কাজ করাসহ দুর্নীতি রোধে  কাজ করার বার্তা আসতে পারে। একজন সিনিয়র সচিব বলেন, এজেন্ডাতে উল্লেখই আছে শুদ্ধাচার ও সুশাসন। সুশাসন আলোচনা আসলে দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসনের প্রতি যথাযথ সম্মান এ বিষয়গুলো আলোচনায় আসাই স্বাভাবিক। এ ছাড়াও নতুন  অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে সেটি বাস্তবায়নের নির্দেশনাও থাকতে পারে। আরেকজন সিনিয়র সচিব বলেন, কতিপয় কর্মকর্তার কারণে সবাই বিব্রত। এ সভায় এ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা থাকতে পারে।  এ ছাড়াও একটা রাজনৈতিক সরকারের ইশতেহার বাস্তবায়ন নিয়ে দিকনির্দেশনা থাকে। যেহেতু এবার প্রধানমন্ত্রী সভায় থাকবেন না সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর কোনো মেসেজ থাকলে সেটিও আমরা পেতে পারি। আরও একজন সচিব বলেন, আজকের সভায় করণীয় বর্জনীয়সহ সরকারের নানা বিষয় আলোচনা হতে পারে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে শুদ্ধাচার ও সুশাসনের বিষয়টি। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টিও থাকতে পারে। শিক্ষকদের আন্দোলন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়েও সভায় আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমান সরকারের প্রথম সচিব সভায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন সরকারপ্রধান। সারা দেশে এখন মানুষের মুখে মুখে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদ অর্জন, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার অঢেল সম্পদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমানের হাজার কোটি টাকার সম্পদ, এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি চিত্র ফাঁস হওয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কতিপয় কর্মকর্তার লোভের কারণে সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তাও প্রশ্নের মধ্যে পড়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে নিজেদের ইমেজ রক্ষার্থে সেবার মানসিকতা বাড়ানোসহ, ইতিবাচক মনোভাব, মন্ত্রণালয় ও অধীন দফতরে কড়া নজরদারি, দুর্নীতিতে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি বিষয় উঠে আসতে পারে আজকের সভায়।

সাধারণত, প্রধানমন্ত্রী সচিব সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী থাকছেন না সচিব সভায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকে নানা দিকনির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান। প্র্রথম বৈঠকের পাঁচ মাসের মাথায় এ বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে আলোচ্যসূচিতে আরও আছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ। সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর আওতাধীন দফতরসমূহের শূন্যপদ পূরণ (যে সব উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে অথচ জনবল নিয়োগ হয়নি সে সব শূন্যপদ পূরণসহ), ওয়েব পোর্টাল নিয়মিত হালনাগাদকরণ, সুনীল অর্থনীতির কার্যক্রম সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ, ডি-নথিতে ডিজিটাল স্বাক্ষর চালুকরণ, পরবর্তী জেনারেশন এপিএ প্রবর্তন, ব্রিটিশ আমলে (০৩ মে ১৭৯৯ হতে ১৮ এপ্রিল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) ইংরেজি ভাষায় প্রণীত আইনসমূহ বাংলায় যুগোপযোগী করে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম; কেন্দ্রীয় রেকর্ড রুম স্থাপন, মন্ত্রিসভা বৈঠক, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, তোষাখানার বিভিন্ন উপহার সামগ্রী জমা প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর