শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাগরে রাজত্ব ২০ জলদস্যু বাহিনীর

লুটের মালের ভাগ পায় চার পক্ষ, নেপথ্যে ৭০ বড় ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সাগরে রাজত্ব ২০ জলদস্যু বাহিনীর

বঙ্গোপসাগরে চলছে ২০ জলদস্যু বাহিনীর রাজত্ব। তারা ট্রলার থেকে মাছ লুট ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। জড়িত গুম-খুনের সঙ্গেও। এসব বাহিনীকে আশ্রয় প্রশ্রয়, লালন-পালন করেন কথিত ৭০ ‘বড় ভাই’। লুট করা মালের ভাগ পায় চার পক্ষ। গডফাদাররা দল ভারী করতে টার্গেট করেন বেকার যুবক এবং একাধিক মামলার আসামিদের। অনেক সময় ভুয়া মামলা করেও অনেককে ফেরারি করা হয়। এক সময় তাদের জলদস্যু বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, সাগরে সক্রিয় জলদস্যু বাহিনীর মধ্যে ১০টিকে সবচেয়ে দুর্ষর্ধ মনে করা হয়। এ বাহিনীগুলো হলো- ইসহাক মেম্বার বাহিনী, নুরুল আবছার বদু বাহিনী, জালাল বাহিনী, আনসারুল ইসলাম টিপু বাহিনী, আনসার বাহিনী, ইদ্রিস বাহিনী, জব্বার বাহিনী, তারেক বাহিনী, ইসলাম মাঝি বাহিনী এবং শাহাদাত মেম্বার বাহিনী। র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুবুল আলম বলেন, বঙ্গোপসাগর জলদস্যুমুক্ত করতে কাজ করছে র‌্যাব। চালানো হচ্ছে নিয়মিত অভিযান। এরই মধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনতেও কাজ চলছে। র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে ১৫০ জলদস্যু। তিনি জানান, ‘যারা আলোর পথে ফিরে আসতে চায়, তাদের পাশে থাকবে র‌্যাব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, গডফাদারদের নির্মূল না করা পর্যন্ত সাগরে জলদস্যু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাই গডফাদারদেরও গ্রেফতারের আওতায় আনা জরুরি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় জলদস্যু বাহিনী রয়েছে অন্তত ২০টি। এদের নিয়ন্ত্রণ করেন ৭০ জন কথিত বড় ভাই। এ বড় ভাইদের মধ্যে ২০ জন রাজনীতিবিদ, ৩০ জন আড়তদার, মাছ ও লবণ ব্যবসায়ী এবং ট্রলার মালিক রয়েছেন। ২০ জনের মতো আছেন জনপ্রতিনিধি। যাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান,  ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য। প্রতি বাহিনীতে রয়েছে ১৫ থেকে ২৫ সদস্য। ৫ থেকে ১০ দিনের টার্গেট নিয়ে সাগরে যায় তারা। জলদস্যুদের তিনটি পক্ষ বিনিয়োগ করে। এক পক্ষ দেয় তেল-খরচ। আরেক পক্ষ দেয় অস্ত্রের জোগান। আরেকটা পক্ষ সরবরাহ করে বোট ও খাবার। ডাকাতির পর মাছ ও অন্যান্য মালামাল চারটি ভাগ করা হয়। আশ্রয়দাতা মাফিয়ারা পান ৪০ শতাংশ। তেলের খরচ বহনকারী এবং অস্ত্র সরবরাহকারী গ্রুপ পায় ১৫ শতাংশ করে। বাকি ৩০ শতাংশ পায় বাহিনীর সদস্যরা। গডফাদার ও বাহিনী প্রধান নিজেদের দল ভারী করতে টার্গেট করেন কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া এবং বাঁশখালী এলাকার বেকার যুবক ও একাধিক মামলার আসামিদের। প্রথমে তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। নগদ টাকা পাওয়ার পর ওই ব্যক্তি সাহায্যকারী মাফিয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। পরে ওই মাফিয়ার কথামতো চলে যান সাগরে জাহাজ ডাকাতি করতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জলদস্যু জানান, মাফিয়ারা দল ভারী করতে নির্দয় পদ্ধতি অনুসরণ করেন। থানা পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে টার্গেট করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একের পর এক ফিটিং মামলা দেওয়া হয়। একাধিক মামলার কারণে এক সময় আত্মগোপন করেন ওই ব্যক্তি। পরে তাকে গ্রেফতার এড়ানোর নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাগরে ট্রলার ডাকাতি করতে।

সর্বশেষ খবর