পিরোজপুর জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা বাজারসংলগ্ন বেলুয়া নদীতে সপ্তাহের দুই দিন বসে ভাসমান হাট। এখানে নৌকায় ঢেউয়ের দোলায় চলে বেচাকেনা। স্থানীয়রা জানান, ভাসমান এ হাটের বয়স প্রায় শত বছর। থাইল্যান্ড ও ভারতের কেরালার ভাসমান বাজারের মতো গুছিয়ে গড়ে তুলতে পারলে এটিও হতে পারে নতুন একটি পর্যটন কেন্দ্র, যা দেখতে দেশ ও বিদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের আগমন ঘটতে পারে।
ভাসমান বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বেলুয়া নদীতে ভাসমান হাট সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে। প্রায় ১০০ বছর ধরে এ হাটে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি, ধান ও চাল বেচাকেনা করছেন। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত বলে স্থানীয় লোকজন এই ভাসমান হাটে নৌকায় বেচাকেনা করে আসছেন। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ হাটে চলে বেচাকেনা। এ ভাসমান হাটে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি, ধান চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনা চলে। নাজিরপুর উপজেলা মুগারজোড়, উত্তর কলারদোয়ানিয়া, মুনিরাবাদ, গাওখালী, কর্ণখালী, মেদা, কলারদোয়ানিয়াসহ ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ হাটে বিক্রি করেন। হাটে রয়েছে ভাসমান খাবারের দোকানও।
ব্যবসায়ী নিত্যানন্দ সাহা জানান, জেলার সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট বলে এখানে সব প্রকার পণ্যই পাওয়া যায় খুব সহজে। এলাকার কৃষকরা ছোট ছোট নৌকায় করে পণ্য নিয়ে এ হাটে আসেন। হরেক রকম সবজি ও ফলমূল মেলে ভাসমান বাজারে।পাওয়া যায় আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আতা, জামরুল, এবং সবজি বরবটি, করলা, কাঁকরোল, পানিকচু, কচুরলতি, লেবু, বোম্বাই মরিচ, শসা, পেঁপে, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, তাল, নারিকেল, পাটশাকসহ বিভিন্ন সবজি। এসব বিক্রি হয় পাইকারি দরে। পাইকাররা এখান থেকে কিনে ট্রলারবোঝাই করে নিয়ে যান ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। প্রতি হাটে প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেচাকেনা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসাইন জানান, জেলার ঐতিহ্যবাহী এ ভাসমান বাজারটিকে ঘিরে থাইল্যান্ড ও ভারতের কেরালার ন্যায় পর্যটন স্পট তৈরি করা সম্ভব। কারণ এ ভাসমান হাট দেখতে প্রায় দেশ-বিদেশের নানা স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন। প্রশাসন সঠিক নজরদারি ও তদারকি করলে এটি দেশের একটি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, বেলুয়া নদীর ভাসমান হাটটি জেলার একটি ঐতিহ্য বহন করছে। শত বছর ধরে নদীতে ভেসে ভেসে ক্রয়-বিক্রয়ের এ হাটটিকে প্রশাসক আরও সুন্দর করা চেষ্টা করছে। এ ছাড়াও এ স্থানটিকে নতুন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।