শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিচারক নয় পেশকার অব্যাহতি দিলেন আসামিদের!

আদালত প্রতিবেদক

জামিন জালিয়াতি কিংবা বিচারকের কোনো আদেশ নয়, পেশকারের নির্দেশে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে ভয়ংকর কিছু আসামি। বিষয়টি বিচারকের নজরে এলে তিনি পুলিশ ডেকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় একই আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. নূরে আলম বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত-৯ এর পেশকার খন্দকার মোজাম্মেল হক জনিকে তিন দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে  নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক সুমন চন্দ্র সরকার। এ সময় আসামি পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজবী। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসান রিমান্ডের আদেশ দেন। জানা যায়, আদেশ জালিয়াতির ওই ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে। নথিপত্রের আদেশে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি থাকার কারণে ধার্য তারিখে আসামিদের আর আদালতে হাজির হতে হয়নি। এ ঘটনা ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর নজরে এলে পেশকারকে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে পেশকার খন্দকার মোজাম্মেল হক জনি লিখিত ব্যাখ্যা দেন বিচারকের কাছে। বিচারক লিখিত ব্যাখ্যায় সন্তষ্ট না হয়ে তাকে পুলিশে দেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি খন্দকার মোজাম্মেল হক জনি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার- ২৪(০৫)২০১৪ নম্বর মামলায় ২০২২ সালে ৯ মার্চ ও ২১ মার্চ দুটি ভিন্ন আদেশ নথিতে লিপিবদ্ধ করেন। তাতে দেখা যায়, ২১/০৩/২০২২ তারিখের সেই আদেশে আসামি অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে, তাকে মুক্তি প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

উক্ত আদেশের স্বাক্ষর অত্র আদালতে দায়িত্ব প্রাপ্ত বিচারকের না হওয়া এবং উক্ত আদেশ পেশকার খন্দকার মোজাম্মেল হক কর্তৃক লিখিত হওয়ায় এটি সুস্পষ্ট হয় যে, তিনি বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে পেশকার হিসেবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের বরখেলাপ করেছেন। একই সঙ্গে বিচারকের অগোচরে উক্তরূপ আদেশ প্রচার করেছেন। শুধু তাই নয় নিয়মানুযায়ী মামলার নথি রেকর্ড রুমে না পাঠিয়ে তিনি নিজ টেবিলের নিচে গোপনে সংরক্ষণ করেন। আসামিদের দ্বারা লাভবান হয়ে তিনি এ বেআইনি কাজ করেছেন। মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ৩ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানার এক মামলার বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারকের আদালতে প্রেরণ করা হয়। আসামি এক্ষেত্রেও বিচারকের অগোচরে ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল মামলার আসামি নাসির উদ্দিন ও আশিকুর রহমানকে প্রবেশন প্রদানের আদেশ কজলিস্ট ও কোর্ট ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন। যদিও এরূপ কোনো আদেশ বিচারক দেননি। এমনকি নথিটি শুনানির জন্য বিচারকের কাছে উপস্থাপনও করা হয়নি। আসামি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে এরূপ ন্যক্কারজনক অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এসব বিষয়ে গত ৩০ জুন তারিখে তাকে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলে তিনি গত ১ জুলাই নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে কারণ দর্শানোর জবাব প্রদান করেন। তার লিখিত ব্যাখ্যা হতেও এটি সুস্পষ্ট যে, তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে এসব হীন অপরাধ সংঘটন করেছেন যা চাকরিবিধি ও শৃঙ্খলা বিধিমালার পরিপন্থি।

সর্বশেষ খবর