রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-এর পুষ্পগুচ্ছ হলে চলছে প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী। সোনা-রুপার পাত ও তার তৈরির মেশিন, পলিশ মেশিন, রিং বড় করার মেশিন, গোল্ড পিউরিটির টেস্ট মেশিন, স্পেকটোমিটার মেশিনসহ গহনা তৈরির আধুনিক নানা মেশিন-যন্ত্রাংশ নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বিশ্বের ১০ দেশের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান। তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীর শেষ দিন আজ। দেশের ঐতিহ্যবাহী ও পণ্যভিত্তিক সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। উদ্বোধনী দিনেই স্বর্ণশিল্পের আধুনিক জুয়েলারি মেশিনারিজ দেখতে এ খাতের ব্যবসায়ীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। গতকাল প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছুটির দিন হওয়ায় দিনভর সারা দেশের প্রায় ৩ হাজার জুয়েলারি ব্যবসায়ীর পদচারণে মুখরিত ছিল প্রদর্শনীস্থল। গতকাল প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা যায়, জুয়েলারি তৈরির যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীর স্টলগুলো ঘুরে দেখছেন দর্শক। বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন খুঁটিনাটি বিষয়। অনেকে কিনছেন পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী আধুনিক মেশিন। চীন ও ইতালি থেকে বাহারি ডিজাইনের স্বর্ণের চেইন তৈরির অটোমেটিক মেশিন নিয়ে মেলায় এসেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এম শাকসি ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার গুঞ্জন প্রিয়দর্শী বলেন, ‘চেইন তৈরির অটোমেটিক মেশিন আছে আমাদের কাছে। মেশিনগুলোর মূল্য ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মতো। এ মেশিনগুলো চীন ও ইতালি থেকে আনা। একেকটি মেশিন একেক ডিজাইনের চেইন তৈরি করে।’ স্বর্ণের গহনা তৈরির দেশি যন্ত্রাংশ নিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বণিক জুয়েলারি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। প্রতিষ্ঠানের মালিক কমল বণিক বলেন, ‘আমাদের এখানে দেশে তৈরি মেশিনারিজ রয়েছে আবার ভারতের তৈরি মেশিনারিজ রয়েছে। এখানে প্রায় ৪০ পদের মেশিন নিয়ে এসেছি আমরা। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০ ধরনের মেশিন আমরা দেশে তৈরি করেছি। বাকি মেশিনগুলো ভারত ও চীন থেকে আনা। সোনা-রুপার পাত তৈরির মেশিন, তার তৈরির মেশিন, পলিশ মেশিন, রিং বড় করার মেশিন আছে আমাদের স্টলে। পাশাপাশি পলিশিং করাসহ গহনা তৈরির যাবতীয় যন্ত্রাংশ আছে।’ ট্রাস্ট ইনস্ট্রুমেন্ট বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার তৌকির আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাতটি মেশিন বিক্রির জন্য প্রদর্শনী করছি। আমাদের এখানে হলমার্ক সেটআপসহ গোল্ড পিউরিটির টেস্ট মেশিন রয়েছে। এখানে ১২ থেকে ৬০ লাখ টাকার মেশিনারিজ রয়েছে। এর মধ্যে ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্র রয়েছে স্পেকটোমিটার মেশিন।’ হবিগঞ্জ জেলা থেকে এসেছেন পলাশ বণিক। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় আমরা বণিক সমিতির সদস্যরা এখানে এসেছি। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মেশিনারিজ দেখেছি। আবার দেশি প্রতিষ্ঠানের মেশিনারিজ দেখলাম। মেলা থেকে আমরা হবিগঞ্জ বণিক সমিতির সদস্যরা মিলে একটি হলমার্ক তৈরির মেশিন নিয়েছি। সেই মেশিনের খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করছি।’ চেইন তৈরির মেশিন নিয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানান বণিক সমিতির আরেক সদস্য।

লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে এসেছেন পলাশ শিল্পালয়ের কর্ণধার পলাশ। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা হাতেই গহনা তৈরি করি। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের কাছে মেশিনের কাজ চান। তাই এ প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এলাম কেমন মেশিনারিজ আছে। আমরা কী ধরনের মেশিন ব্যবহার করতে পারি, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পেরেছি; যা আমাদের ব্যবসার উন্নতির জন্য কাজে লাগবে। আমরা এজন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।’ দেশে নতুন জুয়েলারি কারখানা স্থাপন ও পুরনো কারখানাগুলোয় আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন এবং রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে গড়ে তোলার ল্েয আয়োজিত তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আজ শেষ দিন। প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী বাংলাদেশ (আইজেএমইবি) ২০২৪ শীর্ষক এ প্রদর্শনীতে এবার অংশ নি"েছ বিশ্বের ১০ দেশের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের আটটি প্রতিষ্ঠান-তিশ্য সিএনসি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, নিও ইনস্ট্রুমেন্ট, মাইক্রো ম্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, অনন্ত জুয়েলার্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সোলাংকি মেশিনারিজ ওয়ার্কস, ইরা করপোরেশন, কোয়ান্টাম ইকুইপমেন্ট ও অ্যাকজেট সলিউশন, প্যাসিও ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেড। ইতালির দুটি প্রতিষ্ঠান-জেটিই ও ফাস্টি। তুরস্কের দুটি প্রতিষ্ঠান ওটেক ও গুভেনিস। জার্মানির ফিশার। চীনের ডু ইট ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড। থাইল্যান্ডের বেসিক জুয়েলারি কোম্পানি লিমিটেড। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে অংশ নি"েছ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান-ড্রিমজ ইনস্ট্রুমেন্ট টেকনোলজি, রাজঐশ্বরী, এক্সপার্ট ইনস্ট্রুমেন্ট, ট্রাস্ট ইনস্ট্রুমেন্ট বাংলাদেশ ও র‌্যার্টস বিডি।