শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে দুই বলয়ের দ্বন্দ্বে অস্বস্তি তৃণমূল আওয়ামী লীগে

কর্মীদের পাশাপাশি প্রপাগান্ডায় রাসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চলছে পাল্টাপাল্টি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি গত তিন বছর ধরেই দুই বলয়ে বিভক্ত। মেয়র নির্বাচনের আগে সেই বলয় প্রকাশ্যে আসে। জাতীয় নির্বাচনের পর দুই পক্ষই মারমুখী। আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যাকান্ডের পর সেই বলয় আরও প্রকাশ্য হয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে চালাচ্ছে নানা প্রপাগান্ডা। এতে দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িয়েছেন। দুই বলয়ের রাজনীতিকে ঘিরে অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। রাজশাহীর রাজনীতির এক বলয়ের সামনে আছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অন্যটির নেতৃত্বে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। লিটনের বলয়ে আছেন রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ, সদর আসনের স্বতন্ত্র এমপি শফিকুর রহমান বাদশা এবং জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি। শাহরিয়ার আলম বলয়ে আছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, সাবেক এমপি আয়েন উদ্দিন, জেলা ও মহানগর সাধারণ সম্পাদকরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই রাজশাহীর সংসদীয় আসনগুলোর এমপিদের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয় লিটনের। দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের অভিযোগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, এমপি ফারুক চৌধুরী ও সাবেক এমপি আয়েন উদ্দীনকে নিয়ে সংগঠনে বলয় তৈরি করেছেন শাহরিয়ার আলম। তারা সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কোনো কাজ করেননি। এমপি শাহরিয়ার আলমের অভিযোগ, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীর রাজনীতিতে গ্রুপিং করে রেখেছেন। দলের বিরুদ্ধে যারা সব সময়ই কাজ করেছে, তাদের প্রশ্রয়দাতা তিনি। সব উপজেলাতেই তার নামে আলাদা গ্রুপ আছে। তিনি তাদের আমন্ত্রণে সেখানে যান, কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে স্থানীয় এমপিদের গালাগালি করেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পরও তিনি সংসদ নির্বাচনে একটি ছাড়া কোনো আসনে নৌকার পক্ষে কাজ করেননি। রাজশাহী সদর আসনে জোটের প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত করতে অফিস খুলে নৌকার বিরোধিতা করেছেন। যারা নৌকাকে ফেল করাতে মাঠে সক্রিয় ছিল, তাদের কাছ থেকে ফুল নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। তার প্রশ্রয়ে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগ নানা গ্রুপে বিভক্ত।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম আরও ১০ বছর আগে থেকেই আমার বিরোধিতা করে আসছেন। অথচ আমার হাত ধরেই দলের এমপি হয়েছিলেন। বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আক্কাস সমর্থকদের সঙ্গে যখন শাহরিয়ার আলমের সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হলো, তখন আমিই তাদের থামিয়েছি। আমিই শাহরিয়ারকে ডেকে এনে সভাপতি ঘোষণা করে এসেছি। কিন্তু আমার সিটি নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম ও তার অনুগত এমপিরা কোনো সহযোগিতা করেননি।’ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, যারা গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন, তারাই জানেন মাঠের লড়াইটা কত কঠিন ছিল। কেন্দ্রীয় এত বড় নেতা হয়েও রাজশাহী-৩ ছাড়া সব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন খায়রুজ্জামান লিটন। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো বলয় আছে কি না জানি না। তিনি (লিটন) আমাদের বিপক্ষে সব সময়ই অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের ক্ষতির জন্য সব সময় চেষ্টা করেন।’ রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘খায়রুজ্জামান লিটন এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক। তার বিরোধিতা যারা করছেন, তারা ভুল করছেন।’

অনুসন্ধান অনুযায়ী, দুই বলয়ের বিরোধে বিভক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় নেমেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের একটা অংশ ও অঙ্গসংগঠনগুলো শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠের কর্মীরা। ফেসবুকে প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ওমর ফারুক চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ছবি ব্যবহার করে নানা নেতিবাচক কথা লেখা হচ্ছে। এই প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘যখন লিটনের নানা অনিয়মের খবর বাইরে আসে, তখন ফেসবুকে আমাদের নামে প্রপাগান্ডায় নামানো হয় একটা গ্রুপকে। যারা মন্ত্রী-এমপি তারা তো আওয়ামী লীগের। প্রেসিডিয়াম সদস্য যদি দলের নেতাদের চরিত্র হনন করতে দলের কর্মীদের ব্যবহার করেন, তাহলে আর কী করা? নিশ্চয় কেন্দ্র বিষয়টা পর্যবেক্ষণে রেখেছে।’

সর্বশেষ খবর