রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

চাঁদপুরে সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করায় ইমাম চাকরিচ্যুত!

চাঁদপুর প্রতিনিধি

মসজিদে বয়ানের সময় সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চাকরি হারিয়েছেন এক ইমাম। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া এবং কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করায় চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, চাঁদপুরের মতলব উত্তর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সাইফুদ্দিন বেপারী স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২২ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ার কারণে ইমামের চাকরি গেল’ লিখে একটি পোস্ট করেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় আরও তিন পরিবারের সদস্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করায় মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীর সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে ২৯ জুন সন্ধ্যায় এক বৈঠকের মাধ্যমে ওই চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেন তারা। চার পরিবার হলো- জোড়খালি গ্রামের ব্যাপারীবাড়ির সাইফুদ্দিন, সরকারবাড়ির গোলাম নবী সরকার, জোবায়ের ও মানিক সরকারের পরিবার। এই চার পরিবারে মহিলা, বয়োবৃদ্ধ ও শিশু মিলিয়ে ৩৯ জন সদস্য রয়েছেন।  এমন সিদ্ধান্তের পরপরই শিপন আহম্মেদ নামের স্থানীয় বাসিন্দার ফেসবুক আইডি থেকে সাইফুদ্দিনের ছবি পোস্ট করে তাকে ‘সমাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে’ বলে প্রচার করা হয়। তারপর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছে।  মসজিদের ইমাম রহমত উল্লাহ বলেন, ঈদের পরের শুক্রবার মসজিদে সুদ ও ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করলে কমিটির লোকজন ক্ষেপে যান। তখন ইমামকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেন। চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজী বলেন, সমাজের মুসল্লিদের অপমান করায় ইমামকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদেরকে মসজিদে আসা-যাওয়া এবং সমাজের অন্য সবার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়।

সাইফুদ্দিন বলেন, পৌর কাউন্সিলর সবুজ বেপারী গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মসজিদ কমিটি। আমি তো ফেসবুকে কারও নাম নিয়ে পোস্ট করিনি। সবুজ ব্যাপারী বলেন, দুই পরিবার ক্ষমা চেয়েছে। বাকি চার পরিবার ক্ষমা চাইলে এই সিদ্ধান্ত থেকে গ্রামবাসী সরে আসবে। চাঁদপুর সুজনের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, একজনকে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ কাউকে বা সরকার কাউকে দেয়নি। এটাকে যত দ্রুত নিবারণ করা যায়, ততই মঙ্গল। সমাজচ্যুতর বিষয়টি প্রশাসনের শক্তভাবে মোকাবেলা করা উচিত। মতলব উত্তর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তী ঘটনা জানা নাই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আপাতত এর সমাধান করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তার মনে হয়েছে ইমামের চাকরিচ্যুতির সঙ্গে বয়ানের সম্পর্ক নেই।

সর্বশেষ খবর