সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঝুলছে পৌনে ৫ লাখ মাদক মামলা

♦ পাঁচ বছরে বেড়েছে ৩ লাখের বেশি ♦ দ্রুত বিচার না হলে অপরাধ কমবে না- অভিমত আইনজীবীদের

আরাফাত মুন্না

ঝুলছে পৌনে ৫ লাখ মাদক মামলা

রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ এক আসামিকে গ্রেফতার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর ছয়জনকে সাক্ষী করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালের ২৮ মার্চ বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। আসামি কিছুদিন কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তি পান। ঢাকার আদালতে বিচারাধীন এ মামলার অভিযোগ গঠনের পর ১৩ বছরের বেশি সময় পার হলেও নিষ্পত্তি হয়নি। শুধু এ মামলাই নয়, সারা দেশের আদালতগুলোতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা পৌনে ৫ লাখ মামলা বিচারাধীন। একাধিকবার আইন সংশোধন করেও গতি বাড়ানো যায়নি মাদক মামলা নিষ্পত্তিতে।

সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের আদালতগুলোতে মাদকের ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ২৬৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অধস্তন আদালতে বিচারাধীন মাদকের মামলার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬। অর্থাৎ পাঁচ বছরে আদালতগুলোতে মাদকের বিচারাধীন মামলা বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪১৫টি।

আইনজীবীরা বলছেন, দেশে বর্তমানে মাদকের ব্যবহার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। মামলাও অনেক হচ্ছে। কিন্তু মামলাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় আসামিরা বেরিয়ে আবারও একই কারবারে জড়াচ্ছে। ফলে মাদক নিয়ে ধরা পড়লে বিচার হবে, এই ভয়টা তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একদিকে মাদকদ্রব্য ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। অন্যদিকে  বিচারে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত না হলে, অপরাধীর সাজা নিশ্চিত না হলে মাদকের বিস্তার কমবে না।

আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মাদক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ সাক্ষী হাজির করতে না পারা। তিনি বলেন, মামলা করার বিষয়ে পুলিশ বা বাদীপক্ষ অনেক বেশি উৎসাহী থাকেন। তবে সাক্ষী হাজির করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে তাদের সেই উৎসাহ থাকে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে ঝুলতে থাকে মামলা। এই আইনজীবী বলেন, মাদক মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের কঠোর শাস্তির নিশ্চিতের মাধ্যমে নজির সৃষ্টি করতে হবে। যাতে এ ধরনের অপরাধ পুনরায় করতে সাহস না পায় অপরাধীরা।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মাদক মামলার বিচারের জন্য প্রতি জেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিধান রাখা হয়। তবে ট্রাইব্যুনাল না হওয়া পর্যন্ত জেলা দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতকে বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিচারক ও এজলাস সংকটের কারণ দেখিয়ে পরে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায় সরকার। ২০২০ সালের নভেম্বরে আইনটিতে সংশোধনী আনা হয়। জেলা দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতসহ (ক্ষেত্রবিশেষে মহানগর দায়রা আদালত ও মহানগর অতিরিক্ত দায়রা আদালত) মাদকের পরিমাণসাপেক্ষে এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও বিচারের বিধান রাখা হয়। এ আইন অনুযায়ী ৫ বছরের (ক্ষেত্রবিশেষে ৭ বছর) নিচে সাজা দিতে পারেন মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট। দায়রা আদালত ও অতিরিক্ত দায়রা আদালত মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজা দিতে পারে। অভিযোগপত্র গঠনের সময় থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। এ সময় সম্ভব না হলে আরও ৩০ কার্যদিবস, না হলে আরও ১৫ কার্যদিবস (সুপ্রিম কোর্টকে অবহিত করে) সময় নেওয়া যাবে। আবশ্যিকভাবে এই বিধান প্রতিপালনের কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বিচার শেষ না হলে কী হবে তা বলা নেই।

সর্বশেষ খবর