সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

শিশুর ভিতর আরেক শিশু, অস্ত্রোপচার গাজীপুরে

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্রুণের ভিতর ভ্রুণ জন্ম নেওয়া এক শিশুর অস্ত্রোপচার করেছেন একদল চিকিৎসক। ২৮ দিন বয়সি শিশুটির নাম আবদুল্লাহ। সার্জারির পর শিশুটি সুস্থ অবস্থায় রয়েছে। শনিবার সকালে শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শংকর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল বিরল এ অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন। ডা. শংকর চন্দ্র দাস বলেন, ‘ফিটাস ইন ফিটু’ একটি জন্মগত সমস্যা যা সচরাচর ঘটে না। যা প্রতি ৫ লাখ শিশুর জন্মে একটি পাওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে এ রকম ঘটনা ঘটেছে প্রায় ২০০-এরও কম। বাস্তবে এটি হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি শিশুর ভিতর আরেকটি শিশু। দেশেও এ জাতীয় রোগীর অপারেশন হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। আর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ জাতীয় অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম।

শিশুটির পিতা এমরান হোসেন একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি এলাকায়। এটি তার প্রথম সন্তান। তিনি জানান, শিশুটি গর্ভে আসার পর প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। সেখানে শিশুটির এমন অবস্থা নির্ণয় করা যায়নি। পরে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলে চিকিৎসক শিশুটির পায়ুপথ সংলগ্ন একটি মাংসের পিে র মতো দেখতে পান। সেই চিকিৎসকের পরামর্শে শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দাসের স্মরণাপন্ন হলে তিনি শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয়। এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিব সেলিম খাজা, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামসুল হুদা, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মনিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মইনুল হোসেন চৌধুরীসহ সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া, আইসিইউ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

ডা. শংকর চন্দ্র দাস ‘ফিটাস ইন ফিটু’ সম্পর্কে বলেন, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে, অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিক্ত হওয়ার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোষ বিভাজনের কোনো একপর্যায়ে যদি কোষগুলো সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়, তবে দুটি যমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলো অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষযুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ শিশু জন্ম হয় এবং কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অন্য একটি বাচ্চা বড় হতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বাচ্চাটির সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এই বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালির মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ‘ফিটাস ইন ফিটু’। এতে সাধারণত শিশুটির ব্রেইন তৈরি হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেরুদে র হাড় তৈরি হয়। ক্ষুদ্র আকারে হাত-পা তৈরি হয়। অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির অবস্থান হয় সুস্থ শিশুটির পেটের ভিতর। বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশুটির অবস্থান হতে পারে বুকের ভিতর, তলপেটে মাথার ভিতর, মুখের ভিতর, অ কোষের ঝুলির ভিতর অথবা পায়ুপথেও পেছনে। এ শিশুটির ‘ফিটাস ইন ফিটু সেক্রোকক্সিসিজায়ায় রিজিয়ন এরিয়ায়’ অর্থাৎ তার পায়ুপথের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

সর্বশেষ খবর