শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
সেমিনারে বিশিষ্টজনদের আহ্বান

ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক, মাদক গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমানে দেশে মাদক ভয়ংকর রূপে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক, মাদকের

গডফাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পাশাপাশি মাদকদ্রব্য অধিদফতরের লোকবল বাড়ানোসহ অভিভাবকদের আরও সচেতন থাকার পরামর্শ দেন বিশিষ্টজনরা।

গতকাল সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আয়োজিত বর্তমান সরকারের নির্বাচনে ইশতেহার ২০২৪ অনুযায়ী ‘অবৈধ মাদক নির্মূলে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি। সেমিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক সচিব মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আবু তালেব, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক (অব.) অধ্যাপক ডা. মহাদেব চন্দ্র ম ল, মানস সভাপতি ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহরিয়া আফরিন ও সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তৌহিদুল হক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ইকবাল মাসুদ, ইউএনওডিসির আবু তাহের, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক সুভাষ সিংহ রায়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল হান্নান শৈলী প্রমুখ। মূল প্রবন্ধে সংস্থাটির মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জনবল বৃদ্ধি ও নিজস্ব প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন, অধিদফতরকে আধুনিকায়ন ও যানবাহন বৃদ্ধির দাবি জানান। তিনি বলেন, অধিদফতরে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন ও ডগ স্কোয়াড অনুমোদন, প্রতিটি জেলায় নিজস্ব অফিস ভবন স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মাদক মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করতে অধিদফতরের প্রসিকিউটর ও সহকারী প্রসিকিউটরগণকে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৪৯২ ধারায় ক্ষমতা প্রদান, মানিলন্ডারিং ও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ইউনিট গঠন, অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিভাতা ও অস্ত্র প্রদানসহ অধিদফতর আধুনিক দাবি জানান তিনি।

সেমিনারে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স রয়েছে। তারপরেও দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক ঢুকছে। বিশেষ করে নৌপথে ঢুকছে বেশি। এসব বন্ধে নজরদারির পাশাপাশি সংস্থাগুলোকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, এক সময় মালয়েশিয়ায় মাদকের বিস্তার ছিল। এখন তাদের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে মাদক নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। সে জন্য মাদক নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে আধুনিক সরঞ্জাম, বিদেশ প্রশিক্ষণ, ডগ স্কোয়াডসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে কেন মাদক বন্ধ হয় না। কারণ, জনপ্রতিনিধিরা মাদক কারবারির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। প্রতিটি গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গাঁজা, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক এখন সহজে পাওয়া যাচ্ছে। ওখানে মাদক যায় কীভাবে? মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অফিস না থাকলেও অন্যান্য সংস্থার অফিস রয়েছে। কিন্তু এ মাদক কারবারিদের অধিকাংশকেই ধরা হচ্ছে না। কমিশন না দিলেই তখন অল্পসংখ্যক কিছু ধরছে। মাদক তখনই বন্ধ হবে যখন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে জড়িত হবে না। একই সঙ্গে অবৈধ টাকার মালিকরা এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না। এই দুটি জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মাদকের বিস্তার অনেকটা কমে আসবে।

তিনি ঢাকার পার্শ্ববর্তী চনপাড়া বস্তির মাদকের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে বলেন, সবাই জানে চনপাড়া বস্তি মাদকের আখড়া। এখানে নিয়মিত মাদক কেনাবেচা হয়। এই মাদকের কারণে খুনোখুনি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ অনেক ছাত্র ওখানে খুন হয়েছে। তার পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এর পেছনে কোনো গডফাদার জড়িত আছে তা বের করতে হবে। নঈম নিজাম বলেন, ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটা সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করলে অনেকে মাদক গ্রহণ করবে না। তখন মনে করবে মাদক গ্রহণ করলে সরকারি ও বেসরকারি চাকরি হবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না। তখন প্রত্যেকটি পরিবার মাদক নিয়ে আরও কঠোর হবে এবং সচেতন হবে। সংস্থাটির সাবেক মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক এবং যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ২০১৮ সালে যৌথ অভিযানের পর সব জায়গায় একটা প্রভাব পড়েছিল। ঢাকা শহরে মাদকের আখড়াগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য প্রত্যেকটি এজেন্সি অভিযান করেছিল। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ভূমিকা তো ছিলই। সে জন্য সরকার চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, সিগারেট হচ্ছে মাদক সম্রাজ্যে ঢোকার পথ। কারণ, যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে সিগারেট দিয়ে শুরু করে। এরপর সিগারেটে গাঁজা ঢুকায়। ধীরে ধীরে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যে আসক্ত হতে থাকে। তাই সিগারেট বা তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ৬০ শতাংশ মাদক নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে মাদক যে পরিমাণ বিস্তার হচ্ছে তার চেয়ে সামাজিক মাধ্যম বা অনলাইনে বিস্তার হচ্ছে বেশি। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে সামাজিক মাধ্যমে নজর বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে টেকনোলজিক্যালি আরও দক্ষ হতে হবে।

সর্বশেষ খবর