বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফের বাড়ছে পানি উদ্বেগে বানভাসিরা

প্রতিদিন ডেস্ক

ফের বাড়ছে পানি উদ্বেগে বানভাসিরা

কুড়িগ্রামে পানিবন্দি মানুষ। নৌকায় থাকতে হচ্ছে অনেককে। রান্নাবান্নার পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়ে নৌকাই তাদের এখন ভরসা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাইবান্ধার নদনদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করছে। এদিকে চলতি বন্যা মৌসুমে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে এক দিনও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তার পরও পানিতে ভাসছে তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলার মানুষ। এ ছাড়া ধীরগতিতে পানি কমায় জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৩৪টি ইউনিয়নের ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি ফের গতকাল দুপুরের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরপর ধরলা ও  দুধকুমারের পানিও বাড়তে শুরু করেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও   প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- গাইবান্ধা : গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফিরতে শুরু করেছে নদীতীরবর্তী এলাকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষ। তবে পানি কমলেও বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকার জেগে উঠছে নদীতীরবর্তী এলাকার রাস্তাঘাটসহ ঘরবাড়ির উঠান। পানি কমলেও হতাশা আর দুশ্চিন্তায় পড়েছে বন্যাকবলিত পরিবারগুলো। কৃষিভিত্তিক যাদের জীবনজীবিকা তারা পড়েছেন বেকায়দায়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। রংপুর : পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে ভারতের একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এক দিনে ১ লাখ ৪০ হাজার কিউসেকের বেশি পানি প্রবেশ করেছে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে। গত বছরের ৪ অক্টোবর পানি এসেছে ৮৭ হাজার কিউসেক। ওইদিন রংপুরের পাঁচ জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। প্রবল স্রোতে বাংলাদেশে ভেসে এসেছে ৬টি লাশ। রংপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা এলাকায় এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বড় বড় মাছও ভেসে এসেছে। এত বড় মাছ এর আগে তিস্তাপাড়ের মানুষ দেখেনি। বেশ কিছু গাছও ভেসে আসতে দেখা গেছে। এ ছাড়া এসেছে লাখ লাখ টন পলি। এই পলিই বিপত্তি ঘটাচ্ছে এবার। সিরাজগঞ্জ : ধীরগতিতে পানি কমায় জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৩৪টি ইউনিয়নের এখনো ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। দীর্ঘদিন পানিবন্দি মানুষের কাজকর্ম না থাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে জনপ্রতি ১০ কেজি হারে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনো অনেক মানুষ ত্রাণসামগ্রী থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার বেশ ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও  দুধকুমারের পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৯ উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের প্রায় সোয়া দুই লাখেরও বেশি মানুষ। দ্বিতীয় ধাপের চলমান বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ কারণে উঁচু স্থান থেকে চরের ও দ্বীপচরের বানভাসিরা এখনো ঘরে  ফেরেনি। এসব চরের বাসিন্দাদের অনেকেই এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পানিবন্দি। বাড়িঘরে পানি থাকায় লোকজন নৌকায় বসবাস করছেন। কলাগাছের ভেলাই হচ্ছে এসব মানুষের চলাচলের অবলম্বন। জামালপুর : দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ও সরিষাবাড়ীর জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার  পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত রয়েছে। ফলে দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যায় তলিয়ে গেছে ৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

সর্বশেষ খবর