বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিটি ভোটে প্রার্থিতায় যত পরিবর্তন

বাড়ছে জামানত, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে থাকছে না শর্ত বাদ যাচ্ছে ৩০০ ভোটের স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান

গোলাম রাব্বানী

সিটি ভোটে প্রার্থিতায় যত পরিবর্তন

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জামানত কয়েকগুণ বাড়ানোর চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে কোনো শর্ত না রাখার পরিকল্পনা করছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট সিটির ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর নেওয়ার বিধান তুলে দেওয়া হচ্ছে। সিটির নাগরিকরা চাইলেই মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবেন। এসব বিধিবিধান সংশোধন নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি নির্বাচনের আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী হতে দলীয় প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হয়। আর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের ৩০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হয়। তবে নির্বাচন কমিশন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার শর্ত তুলে দেওয়ার চিন্তা করছে। আগামী সপ্তাহে এসব বিষয় নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের আগেই আইনে সংশোধন আনা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইন সংস্কার নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে বর্তমানে সিটি আইন অনুযায়ী মেয়র প্রার্থীর জামানত হচ্ছে- অনধিক ৫ লাখ ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা; ৫ লাখ হতে ১০ লাখ ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা; ১০ লাখ হতে ২০ লাখ ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ৫০ হাজার টাকা; ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটারের নির্বাচনি এলাকার জন্য ১ লাখ টাকা জামানত নির্ধারিত রয়েছে। তবে এ জামানত কয়েকগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনধিক ১৫ হাজার ভোটারের ওয়ার্ডের জন্য ১০ হাজার টাকা; ১৫ হাজার এক হতে ৩০ হাজার ভোটারের ওয়ার্ডের জন্য ২০ হাজার টাকা; ৩০ হাজার এক হতে ৫০ হাজার ভোটারের ওয়ার্ডের জন্য ৩০ হাজার টাকা; ৫০ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটারের ওয়ার্ডের জন্য ৫০ হাজার টাকার জামানত জমা দিতে হয়। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়।

এদিকে দেশব্যাপী উপজেলা নির্বাচন শেষ করেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির। চলতি বছরের ডিসেম্বরে দুই নির্বাচনের তফসিল দিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ ছাড়া দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিলতা আছে কি না তা জানতে চলতি মাসেই স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেবে ইসি। চিঠির জবাব পেলেই এ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এবারের নির্বাচন ব্যালট পেপার না ইভিএমে হবে সেই বিষয়ে তফসিলের সময় সিদ্ধান্ত নেবে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। এপ্রিলে হতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা। তাই এসএসসি পরীক্ষার আগেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে ইসিকে। জানুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষ সপ্তাহে দুই সিটি নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ সময়সীমা ধরেই নির্বাচন আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে লড়াই হয়েছিল প্রধান দুই দলের প্রতীক নৌকা-ধানের শীষের। তবে এবার এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নাও দিতে পারে। বিএনপি অংশ নেবে কি না সেই বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী করপোরেশনের প্রথম বৈঠক থেকে এর  মেয়াদ গণনা শুরু হয়। এক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালের ২ জুন। দক্ষিণ সিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ৩ জুন। সেই হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটির চলতি বছরের ৪ ডিসেম্বর নির্বাচনি ক্ষণ গণনা শুরু হবে। দক্ষিণ সিটির ক্ষণ গণনা শুরু হবে ৫ ডিসেম্বর। দুই সিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ১ ও ২ জুন। দিন গণনার শুরুর দিন থেকে যে কোনো দিন ভোট গ্রহণ করতে পারবে ইসি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোটার তালিকা প্রস্তুতিসহ নির্বাচনের অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। চলতি মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা ভোটে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটার বাড়ানোর জন্য আগে থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত নির্বাচনে দুই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ছিল ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩০ লাখ ৯ হাজার জন ভোটার ও ১ হাজার ৩১৮টি ভোট কেন্দ্রে ৭ হাজার ৮৫০টি ভোটকক্ষ ছিল। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০ ভোট কেন্দ্রে ৬ হাজার ৫৮৯টি ভোটকক্ষ ছিল।  এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৫২ হাজার।

সর্বশেষ খবর