শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
বন্যা পরিস্থিতি

পানি কমেছে বাড়ছে ভোগান্তি

প্রতিদিন ডেস্ক

পানি কমেছে বাড়ছে ভোগান্তি

দেশে বন্যাকবলিত এলাকার কোথাও কোথাও পানি কমার খবর পাওয়া গেলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণে জানা গেছে, নদ-নদীর পানি ওঠানামা করছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় সব নদনদীর পানি কমেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গতকাল বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিকাল ৩টায় পাওয়া গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঘাঘট নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি ২৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি কমায় গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ির প্লাবিত এলাকায় বানভাসিদের দুর্ভোগ অব্যাহত ছিল। জেলায় এখনো পানিবন্দি  ৪০ হাজারের বেশি পরিবারের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, গাইবান্ধার সব নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।

রংপুর : রংপুরে তিস্তা নদীর পানি ৪৮ ঘণ্টায় কমেছে ৪৩ সেন্টিমিটার। এতে করে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের প্লাবিত কিছু এলাকা থেকে পানি সরে যাচ্ছে। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ২৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের তথ্য দিয়েছে রংপুর আবহাওয়া অফিস। নদীর উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দিনভর তিস্তা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার কমে যায়। শুক্রবারও পানি কমতে থাকা অব্যাহত থাকে। সকাল ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দিনভর ১২সেন্টিমিটার পানি কমে সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, আগামী ১২ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চল ও এর উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে করে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পদ্মা নদীর পানি বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার নদী পানি ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বিপৎসীমার অতিক্রম করায় বেড়িবাঁধের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এ ছাড়া দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে সব নদীর পানি কমার সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন। জেলার যমুনা, ঝিনাই, ধলেশ্বরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে প্রবল স্রোতে যমুনা ও ঝিনাই নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে জেলার ভূঞাপুর, বাসাইল, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নদী তীরবর্তী এলাকার বাড়ি-ঘর, হাটবাজার, ফসলি জমি, রাস্তা, কবরস্থান, মসজিদসহ অনেক স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। এতে নদী পাড়ের মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি এখনো বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি ও ভাঙনকবলিতদের দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে একটানা পানির মধ্যে থাকায় নানা সংকট দেখা দিয়েছে পানিবন্দিদের। কাজ কর্মহীন বানভাসি মানুষ চিড়া-মুড়ি খেয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে বসতভিটাসহ আসবাবপত্রে পচন ধরতে শুরু করেছে। অর্ধ শতাধিকের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ত্রাণ বা সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সুনামগঞ্জ : ভারী বর্ষণ আর ভারতের পাহাড়ি ঢলে আবারও বেড়েছে সুনামগঞ্জের নদনদী ও হাওরের পানি। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫৫ মিলিমিটার ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।

কুড়িগ্রাম : ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের সবকটি পয়েন্টে পানি কমে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল ব্রহ্মপুত্র নদের হাতিয়া পয়েন্টে পানি কমে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া ধরলা নদীর সেতু পয়েন্টে, তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে এবং দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে পানি কমে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ধীরে ধীরে জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু এখনো বানভাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া অনেক বানভাসি তাদের নিজ নিজ ঘরে ফিরতে পারেননি।

তিস্তায় কমছে বন্যার পানি, ভাঙন আতঙ্কে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ।

লালমনিরহাট : উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা তীরবর্তী মানুষ চতুর্থ দফা স্বল্পমেয়াদি বন্যা কাটিয়ে এবার পড়েছেন ভাঙনের মুখে। ৮ জুলাই সকাল থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি উপজেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলে তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা এবং আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চর গোবরর্ধন ও হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েকদিনের ভাঙনে হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। তিন দিনে এ ইউনিয়নের উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের ২০টি পরিবারের আশ্রয়স্থলও এ তালিকায় রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আপাতত আলহাজ আছের মাহমুদ সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে অনেকে জায়গা না পেয়ে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের কাছে ঘরবাড়ি আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায় জানান, ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তিস্তার যেসব পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সে জায়গাগুলোতে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর