শিরোনাম
রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কিছুতেই কেন কমে না জলাবদ্ধতা

এক যুগে খরচ ৩৫০০ কোটি টাকা রাজনৈতিক সদিচ্ছার তাগিদ নগর বিশেষজ্ঞদের

হাসান ইমন

কিছুতেই কেন কমে না জলাবদ্ধতা

রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর খালগুলো দখলের কারণে সংকুচিত, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনায় ভরাট, জলাশয় ভরাট, অপর্যাপ্ত এবং বিকল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা বৃদ্ধি পাওয়াসহ নানা কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণগুলো চিহ্নিত হলেও স্থায়ী সমাধানের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলি, দোকান ও বাসাবাড়ি ডুবে যায়। মালামাল নষ্টে বিপুল ক্ষয়ক্ষতিসহ ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা গত এক যুগে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। তারপরও একটু ভারী বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় ঢাকার অধিকাংশ এলাকা। খাল ভরাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বিকল, জলাশয় ভরাট, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভাব জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

গত শুক্রবার ছয় ঘণ্টায় নগরীতে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি, দোকান ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যায়। বিশেষ করে ধোলাইখাল, শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজারসহ পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে  যায়। এ ছাড়া মতিঝিল, টিকাটুলী, খিলগাঁও, রামপুরা হাজীপাড়া, মৌচাক, গ্রিনরোড, পান্থপথ, মিরপুরসহ দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকায় পানি জমে যায়। যদিও গত তিন বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি ২৫৯টি জলাবদ্ধ স্থান চিহ্নিত করেছে। একই সঙ্গে উত্তর সিটি চিহ্নিত করেছে ১০৩টি স্থান। দুই সিটি এসব এলাকায় সমাধানে কাজ করলেও জলাবদ্ধতা হচ্ছেই।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দায়িত্ব ছাড়ার আগে ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৯ বছরে ব্যয় করেছে ২ হাজার ২৫ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসা ছাড়াও ড্রেনেজ খাতের উন্নয়নে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। পরের দুই বছরে ব্যয় করেছে আরও ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত দুই বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৬১টি জলাবদ্ধ স্থান নির্ধারণ করে ১০৯টি স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৫২ কোটি টাকা খরচ করেছে। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৬০ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর বাইরে দক্ষিণ সিটি ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’ নামে ২০৭ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেও জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হয়নি। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণও। এতে বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে মাটিতে টেনে নেওয়ার সুযোগ অনেক কমে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার এলাকা ও পরিমাণ বেড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল নিয়ে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, ড্রেনেজে নেটওয়ার্ক তৈরি, খালে বৃষ্টির পানির ধারণক্ষমতা ও পানিপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো এবং জলাশয় সংরক্ষণ এবং খাল দখলদারদের উচ্ছেদে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। সরকার এবং জনপ্রতিনিধিরা চাইলে জলাবদ্ধতার চিহ্নিত হওয়া কারণগুলো সমাধান করা সম্ভব। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করতে শুধু খালের আন্তসংযোগ বাড়ানো কিংবা খালের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যথেষ্ট নয়। এর জন্য রাজধানীর চারপাশে যেসব জলাশয়, জলাভূমি, প্লাবনভূমি, পানিপ্রবাহ এলাকা আছে, সেসব এলাকা সংরক্ষণ করতে হবে। খাল দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করে সিটি করপোরেশনকে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টি ও নর্দমাগুলোর ক্যাচপিট থেকে বর্জ্যরে কারণে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হয় না। নদনদীর পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় স্লুইস গেটগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে না পারাও জলাবদ্ধতার কারণ। তিনি বলেন, নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশন লাইন বিজিবি এলাকায় বন্ধ হওয়ার কারণে এ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কলাবাগান, কাঁঠালবাগান ও গ্রিনরোড এলাকার পানি হাতিরঝিল হয়ে নিষ্কাশিত হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য হাতিরঝিল দিয়ে নিষ্কাশন সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর