রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাদক বাণিজ্য ঘিরে টার্গেট কিলিং

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কয়েকটি খুন ও গুমের ঘটনা। অপহরণ দেড় শতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

মাদক বাণিজ্য ঘিরে টার্গেট কিলিং

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে মাদক বাণিজ্য কেন্দ্র করে টার্গেট কিলিং! চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কয়েকটি খুন ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণের ঘটনা দেড় শতাধিক। ক্যাম্পে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দাবি-ক্যাম্পে মাদককেন্দ্রিক অপরাধ কমাতে তৈরি করা হয়েছে তালিকা। চলছে যৌথ অভিযান। গ্রেফতার করা হচ্ছে মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধীদের।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-৮-এর অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদককেন্দ্রিক অপরাধ হচ্ছে কিছু কিছু। যার মধ্যে খুন ও অপহরণ অন্যতম। এ ধরনের অপরাধ রোধে আমরা নিয়মিত যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি। মাদককেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’

মাদক গবেষক ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তর ইউনিটের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প মাদকভান্ডারে পরিণত হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, কাজের অভাব এবং সহজে রোহিঙ্গাদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করতে পারা। এসব কারণ মাদক সংরক্ষণের উপযুক্ত স্থানে পরিণত করেছে ক্যাম্পকে। ক্যাম্প থেকে মাদক পাচারের সিদ্ধান্ত, পাচারের চুক্তি, সংরক্ষণ থেকে শুরু করে সবকিছুই হচ্ছে। মাদকের কারবার নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি সংঘাত বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের রাজধানী খ্যাত মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ বাংলাদেশে প্রবেশের পর উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যায় ৩৪টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে। মাদকের ভান্ডারে পরিণত হয়েছে ক্যাম্পগুলো। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে এমন চারটি উগ্রপন্থি সংগঠন ছাড়াও রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক সংগঠন। মাদক কারবারের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েই সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে ক্যাম্প। মাদকের কারবার কেন্দ্র করে বিদ্যমান গ্রুপগুলোর মধ্যে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি হামলা ঘটে। খুন, গুম ও অপহরণ ক্যাম্পের সাধারণ ঘটনা। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে শুধু মাদক ঘিরে সিংহভাগ খুনের ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগই ছিল ‘টাগের্ট কিলিং’। খুন ছাড়াও অপহরণ সংঘটিত হয়েছে ২ শতাধিক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকের ভয়াবহতার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাত বছরে দায়ের হওয়া মাদক মামলার সংখ্যা ২ হাজার ২০০। পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়ের হওয়া মামলা ২ হাজার ৮৪০। এর মধ্যে ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয় ১৩০টি। ২০২২ সালে ১৪৭ মাদক মামলায় আসামি ১ হাজার ৫২৪ জন। ২০২১ সালে ৬০৫ মাদক মামলায় আসামি ৬৩০ রোহিঙ্গা। ২০২০ সালে ৫৩৮ মাদক মামলায় আসামি ৫৩২ জন। ২০১৯ সালে ১৭৮ মাদক মামলায় আসামি ২৭৪ জন। ২০১৮ সালে ১২৪ মাদক মামলায় আসামি ১৯০ জন। ২০১৭ সালে ৩৫ মাদক মামলায় আসামি ৫৩ জন।

সর্বশেষ খবর