শিরোনাম
রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কোটার পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ বিভিন্ন স্থানে

প্রতিদিন ডেস্ক

কোটা আন্দোলনের নামে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তির প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন।

কোটা আন্দোলনের নামে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের গ্রেফতারসহ সাত দফা দাবিতে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

পরে তারা জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মাঠে নামলে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এক মুহূর্তও টিকতে পারবে না। বিচারপতি মানিক বলেন, কোটা বাতিলের আন্দোলনকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। যারা কি না রাজাকারের সন্তান। এরা প্রশাসনিক দায়িত্ব পেলে তো এখনকার মতো সুপ্রিম কোর্টের কোনো আদেশ মানবে না, ছিঁড়ে ফেলে দেবে। এরা দেশের জাতীয় পতাকা মাথায় বেঁধে পতাকার অবমাননা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, প্রয়োজনে ৭১-এর মতো আবারও অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হব না। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ৭ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- এক. ২০১৮ সালের অসাংবিধানিক ও অবৈধ পরিপত্র বাতিল করে নতুন পরিপত্র জারি করে বঙ্গবন্ধুর উপহার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। দুই. সাম্প্রতিক সময়ে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তিকারীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে ছাত্রত্ব বাতিলসহ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্টের মতো নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। তিন. রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশ করে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নোটিস বোর্ডে তালিকা প্রদর্শনপূর্বক নাগরিকত্ব বাতিলসহ এদের বংশধরদের চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। চার. কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই মেধাবী, কেউ অমেধাবী নয়। সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোটা প্রয়োগ হওয়ার কারণে বৈষম্যমূলক মেধা শব্দ পরিবর্তন করে সাধারণ শব্দ সংযোজনপূর্বক সাধারণ প্রার্থী নামকরণ করে সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। পাঁচ. সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা, মামলা, হত্যা, নির্যাতন ও কটূক্তি স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। ছয়. ২০১৮ সালে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে পুলিশের ওপর নগ্ন সন্ত্রাসী হামলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাত. বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। যশোর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চলমান কোটা আন্দোলনকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার দাবিতে যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্টের উপঅধিনায়ক রবিউল আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এইচ এম মুযহারুল ইসলাম মন্টু, সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন প্রমুখ। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, দেশে উন্নয়ন হয়েছে। তবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসমতাও আছে। তাই অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে কোটার প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে দেশের পতাকা এবং যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে অপমানিত করা না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত। বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কোটাকে ইস্যু করে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তির প্রতিবাদে বগুড়ায় মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করা হয়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ঐক্যজোট জেলা কমিটি এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ঐক্যজোটের আহ্বায়ক এ এইচ এম সুলতান মাহমুদ প্রিন্সের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. আজিজুর রহমান সুমনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রুহুল আমিন বাবলু, মো. আবদুর রউফ খান, মো. আবদুল বারী, সন্তান কমান্ডের সভাপতি পাভেল রানা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোট সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ডের সভাপতি শাহিনুজ্জামান শাহিন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান কবীর জিতু, সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব উদ্দিন, সন্তান কমান্ডের সদস্য মশিউর রহমান বিপ্লব, ওবায়দুর রহমান, কামরুজ্জামান স্বপন, রনজু সরকার, শাকিল মাহমুদ, অমিতাভ সাহা প্রমুখ। তারা বলেন, কোটাকে ইস্যু করে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী সব শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা দেশের প্রচলিত আইনকে শ্রদ্ধা করি। প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করি। কোটা বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। কোটা আমাদের জাতির পিতার দেওয়া উপহার। এই কোটা স্বাধীনতার পর মাত্র কয়েক বছর কার্যকর ছিল। যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধার খুব কম সংখ্যক সন্তানরা এই সুবিধা নিতে পেরেছেন। তারা আরও বলেন, সারা বিশ্বের ন্যায় সুষম বণ্টনের জন্য নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, আদিবাসী কোটার প্রয়োজনীয়তা আছে। যারা কোটার নামে দেশবিরোধী, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে। সেই সঙ্গে কোটাবিরোধীরা রাজপথ না ছাড়লে আমরাও তাদের প্রতিহত করতে রাজপথ ছাড়ব না। কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় কোটার পক্ষে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কুষ্টিয়া জেলা শাখা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শহরের মজমপুর ঘুরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কের মুজিব ভাস্কর্য চত্বরে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুভীন আকতারসহ অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, আমরা লড়ছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দীপ্ত শপথে। আর মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী আন্দোলনের মদতদাতা ও রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছি। বক্তারা বলেন, জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। তাদের অসম্মানকারীদের এদেশে ঠাঁই হবে না। সমাবেশে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ। একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ নেতারা।

সর্বশেষ খবর