বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিয়ানমারে তীব্র লড়াই, বিকট শব্দ টেকনাফে

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টানা কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াই চলছে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে। মর্টার শেল ও ভারী গোলা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে কক্সবাজারের টেকনাফ। পাশাপাশি সেখানে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। এতে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তের এপার থেকে দাঁড়িয়ে মংডুর বসতিতে জ্বলতে থাকা আগুনের কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। মংডুর অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রায় প্রতিদিন সে দেশের সরকারি বাহিনী, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে (টেকনাফে) অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। ফের রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন টেকনাফ সীমান্তের মানুষ।

গত মঙ্গলবার টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মংডুতে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। সরকারি বাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে মংডু টাউনটির দখল হয়ে যাওয়া অংশ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি মংডুতে সরকারি বাহিনীকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়তে সহযোগিতা দিচ্ছেন স্থানীয় রোহিঙ্গারা। এ কারণে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে তাদের ঘরবাড়ি দখলে নিচ্ছে। সীমান্তের সূত্রে জানা যায়, চার মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে আরাকান আর্মি। ইতোমধ্যে রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপসহ দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর ২০টির বেশি সীমান্তচৌকি, ব্যারাকসহ বিপুল এলাকা দখল করে নিয়েছে। মংডু টাউন ও আশপাশের চারটি গ্রাম সিকদারপাড়া, মগনিপাড়া, সুদারপাড়া, ফয়াজিপাড়া এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সেখানে সেনা ও বিজিপির পৃথক দুটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্রে আরও জানা যায়, মংডু টাউনশিপসহ চারটি গ্রাম দখলে নিতে কয়েক দিন ধরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে আরাকান আর্মি (এএ)। অন্যদিকে দখল হয়ে যাওয়া সীমান্তচৌকি ও ব্যারাক পুনরুদ্ধারে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে সরকারি বাহিনী। তারা রাতদিন সমানে বিমান হামলা চালিয়ে আরাকান আর্মিকে ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত তীব্রতর হওয়ায় টেকনাফে অনুপ্রবেশের জন্য নাফ নদে অবস্থান করছিল একটি ট্রলার। তাতে দেশটির বিজিপির ৪০ সদস্য ছিলেন। পরে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। প্রায় প্রতিদিন রাখাইন রাজ্য থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও রোহিঙ্গারা আশ্রিত ক্যাম্পে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় তার প্রভাব এপারের (উখিয়া-টেকনাফে) আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও পড়ছে জানিয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ওপারের কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য কিংবা রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে, সেজন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ওপারের কাউকে আমরা বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না।

টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে নতুন করে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। উল্লেখ্য, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রিত ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর