শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছাত্রদের রক্তের ওপর দিয়ে সংলাপ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের রক্তের ওপর দিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপে যাবে না বলে জানিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ছাত্রদের হত্যার পর সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপ নাই। আদালত সরকারকে অধিকার দেয় নাই ছাত্রদের গুলি করার। আদালত ছাত্রলীগকে অধিকার দেয় নাই ছাত্রদের ওপর হামলা করার। সারা দেশের রাজপথ আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ দাবি তুললে, সরকার সেগুলো শুনবে এবং দাবি যৌক্তিক হলে মেনে নেবে। সরকার আমাদের বোঝালো এই দাবি কোনোভাবেই মানা যাবে না। এখন বলছে এই দাবি মানা যাবে, তাহলে আগে মানেনি কেন। আমরা আমাদের ভাইদের রক্তের ওপর দিয়ে সরকারের সঙ্গে বসব কি বসব না সেটা আমাদের একান্ত সিদ্ধান্ত। সরকার আজ সারা দেশকে কারবালায় রূপান্তর করেছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সরকার যে আইনি প্রক্রিয়ার দোহাই দিয়ে বর্তমান অচলাবস্থা তৈরি করেছে এটার কোনো আইনগত ভিত্তি নাই। আমাদের সঙ্গে আলোচনার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এটা যদি পাঁচ দিন আগে দেওয়া হতো, তাহলে এই অচলাবস্থা তৈরি হতো না। আমাদের যেসব ভাইবোন নিহত ও আহত হয়েছে তাদের বিচার করাই হচ্ছে প্রথম দাবি। এই বাংলার মাটিতে প্রথমে বিচার করতে হবে কেন একটি গণতান্ত্রিক দেশে ছাত্র আন্দোলনে হামলা করা হলো। বিচারের পর আমরা কোটা সংস্কার নিয়ে আলোচনা করব। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আজকে আমাদের ভাইয়ের রক্ত ঝরিয়েছে, বোনের গায়ে হাত দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা যখন মাঠে নামি, তখন পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। সারা দেশের রাজপথ আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আমাদের সমন্বক ও আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য কোনোভাবেই আমার ভাইয়ের রক্তের ওপর দিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারি না। আমরা তখনই আলোচনায় বসব যখন রাস্তা থেকে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ব্যারাকে ফেরত পাঠানো হবে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে দিতে হবে। বন্দুকের নল দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে আমাদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক হবে, আমরা হলে ফিরে যাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকার পরও কেন পুলিশ, বিজিবি গিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি চালাবে। এই দায় ভিসিকে নিতে হবে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদের হত্যার পর সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপ নাই। রক্তের দাগ শুকায় নাই। স্বৈরাচারের বাবাও সংলাপে বসে নাই। আমরাও সংলাপে বসব না। আগে ৪২টি লাশ ফেরত দেন, তারপর সংলাপ। একটাই দাবি স্বৈরাচার পদত্যাগ করবে না হলে আমার প্রত্যেকটা ভাইকে ফিরিয়ে দেবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, পুলিশ ছাত্রদের মারধর করে। আপনারা স্বৈরাচারী করেন, কোনো আপত্তি নাই। ২০ বছর নয়, ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকেন কিন্তু আমার ভাইয়ের রক্তাক্ত হাত আমাকে দেখাবেন এটা আমরা মানব না। আমলা, পুলিশ, বিজিবির উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কীসের মোহে সরকারের কাছে মেরুদন্ড বিক্রি করেছেন। এই জবাব আপনারা দেন। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ। সাংবাদিকদের নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই যার যার জায়গা থেকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে এলে বিজয় আমাদেরই হবে।

সর্বশেষ খবর