চলমান আন্দোলনে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। গত তিন দিনে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় চালানো এসব হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মেট্রো স্টেশনে হামলায় বন্ধ হয়ে গেছে মেট্রো চলাচল। সেতু ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অগ্নিসংযোগে পুড়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এ ছাড়া ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের ফলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, দুর্বৃত্তদের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মেট্রোরেলের এই দুই স্টেশন। টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম), মনিটরসহ বিভিন্ন নির্দেশক বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে অকেজো হয়ে পড়েছে টিভিএম মেশিন। এ ছাড়া যাত্রীসেবা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার চুরি করে নিয়ে যায় হামলাকরীরা। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলার ফলে এই স্টেশন দুটি যাত্রীসেবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। তবে এই দুটি স্টেশন পুনরায় চালু করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে।
এদিকে সেতু ভবন ঘুরে দেখা যায়, দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়েছে সেতু ভবন। পুড়ে গেছে অন্তত ৫৫টি গাড়ি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। তবে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। এই ঘটনার তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সেতু মন্ত্রণালয়। সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মঞ্জুর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। পাশাপাশি পরবর্তী (আপকামিং) প্রকল্পগুলোর নথিপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সাত সদস্যের ঊর্ধ্বতন তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটি সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ফলে অধিদপ্তরটির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তার পরও চিকিৎসকরা দিনরাত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল ভবনটি পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সব নথিপত্র এখানে সংরক্ষিত থাকে। এই ভবন পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কী রাজনীতি থাকতে পারে তা আসলেই বুঝতে পারছি না। এই হামলায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন ঘুরে দেখা যায়, মূল ফটকের ডান পাশে ২০-২৫টি পোড়া গাড়ি পড়ে আছে, বাম পাশে সারি সারি পোড়া মোটরসাইকেল। এ ছাড়া ক্যান্টিন ভবন, প্রডাকশন সেট, অভ্যর্থনা কক্ষ ও সম্প্রচারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এই ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।
ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের ফলে টানা তিন দিন ইন্টারনেট সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন সারা দেশ। গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ডেটা সেন্টার পরিদর্শন শেষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই অগ্নিকাে ডাক বিভাগের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আহত হয়েছেন পাঁচজন কর্মী। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ডাক বিভাগের চারটি গাড়ি।
মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে অগ্নিকাে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালকের গাড়ি, কার্যালয় ও একটি বাস পুড়ে যায়। এ ছাড়াও চলমান আন্দোলনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালী টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বনশ্রী কার্যালয়, ধানমন্ডির ওষুধ প্রশাসন ভবনে অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।