সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

মেগা প্রকল্প ধরে ধরে ধ্বংস

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেগা প্রকল্প ধরে ধরে ধ্বংস

মিরপুরে মেট্রোরেলের অফিসে হামলা ভাঙচুর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সুযোগসন্ধানীরা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো অন্যতম স্বপ্নের মেগা প্রকল্প ধরে ধরে চালানো হয় ধ্বংসযজ্ঞ। বিশেষ করে মেট্রোরেল ও এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের ধ্বংস দেখে আঁতকে উঠছেন সাধারণ মানুষ। আঘাতের ক্ষতচিহ্ন লেগে আছে প্রকল্পগুলোতে।

প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন সূত্র জানায়, আন্দোলন শুরুর দিকে দেশের অন্যতম স্বপ্ন পদ্মা সেতুতে হামলার চেষ্টা করে একদল দুর্বৃত্ত। সেখানে প্রশাসনের প্রতিরোধের মুখে তারা সফল হতে পারেনি। তবে মেট্রোরেল ও এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়েতে তান্ডব চালায় একদল দুর্বৃত্ত। গত শুক্রবার চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেই এ দুটি অন্যতম মেগা প্রজেক্টে হামলা চালানো হয়। ছুটির দিনে মেট্রোরেল বন্ধ থাকলেও সেখানকার গেট ভেঙে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ভাঙচুর করে তারা। এরপর থেকে অনির্দিষ্টকালের            জন্য মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

মেট্রোরেলের সংশ্লিষ্টরা জানান, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম), মনিটরসহ বিভিন্ন নির্দেশক বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। দুটি স্টেশনে কম্পিউটার, মেশিনপত্র, কার্ড রিডার, টিকিট কাউন্টারসহ প্রায় সব জিনিসপত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এগুলোর শতভাগই নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে গতকাল মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া স্টেশন পরিদর্শন করে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এন এম ছিদ্দিক বলেন, আমাদের যে জিনিস ধ্বংস করা হয়েছে এগুলো অর্ডার দিয়ে বিদেশ থেকে এনে প্রতিস্থাপন করে স্টেশনগুলো আবার চালু করতে অন্তত এক বছর সময়ের প্রয়োজন হবে। যারা এ কাজ করেছেন তাদের মধ্যে ন্যূনতম কোনো দেশাত্মবোধ নেই বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, জননিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে মেট্রোরেল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধই থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার এক সপ্তাহ পর মেট্রোরেল চালু হতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে চলমান আন্দোলনে সেতু ভবনসংলগ্ন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালী টোল প্লাজা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুষ্কৃৃতকারীদের দেওয়া আগুনে দাউদাউ করে জ্বলেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজাটি। এরপর থেকেই এখানে কার্যক্রম পুরো বন্ধ রয়েছে। গতকাল টোল প্লাজার সামনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো টোল প্লাজাটি আগুনে পুড়ে কালো হয়ে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। নিচে কাচের কিছু অংশ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। গতকাল বিকালে কারফিউ শিথিলতার সময়ে টোল প্লাজার উল্টো পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কতিপয় ব্যক্তিকে পুড়ে যাওয়া টোল প্লাজার ছবি তুলতে দেখা যায়। তাদের একজন ইব্রাহিম হোসেন বলেন, এটা দেখে একটা কঙ্কাল মনে হচ্ছে। লাল রংবেষ্টিত একটা সৌন্দর্য ছিল টোল প্লাজায়, সেটি এখন কালো কুচকুচে হয়ে গেছে পুড়ে। আরেকজন সামিউর রহমান বলেন, কারফিউতে বের হতে পারি না। এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ধ্বংস করে মানুষ কী পায়? এসব তো আমাদের জন্যই সরকার করে। যারা এসব ধ্বংস চালায় তাদের কোনো মনুষ্যত্ব নেই।

এ ছাড়াও দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়েছে সেতু ভবন। অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে সেখানকার অন্তত ৫৫টি গাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মঞ্জুর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। পাশাপাশি পরবর্তী (আপকামিং) প্রকল্পগুলোর নথিপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সাত সদস্যের ঊর্ধ্বতন তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করবে।

সর্বশেষ খবর