মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সড়কের দুই পাশজুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন

আরাফাত মুন্না

সড়কের দুই পাশজুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন

কোথাও পড়ে আছে আগুনে পোড়া গাড়ি। কোথাও ভেঙে তছনছ সড়ক দ্বীপ। সড়কেই আছে আগুনে পোড়া স্পিড বোটের গলে যাওয়া অংশ। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সব আয়োজনই স্পষ্ট এখানে। এটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে সানারপাড় ইউটার্ন (সাইনবোর্ড) এলাকার গতকালের চিত্র। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই অংশটি গত কয়েক দিনের সংঘাত-সংঘর্ষে ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। গতকাল দুপুর ১২টার পর এই সড়কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন বীভৎসতা। তখনো ধোঁয়া বেরোতে দেখা গেছে দু-একটি গাড়ি থেকে। এই সড়কের দুই পাশজুড়ে দেখা গেছে ধ্বংসের চিহ্ন।

দুপুর সোয়া ১২টায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে সাইনবোর্ডের দিকে একটু আগাতেই দেখা যায় হানিফ ফ্লাইওভারের আগুনে পোড়া টোলপ্লাজা। এখানে টোলপ্লাজা মেরামতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। দায়িত্বরত একজন জানালেন, যানবাহন চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত শনির আখড়া টোলপ্লাজাও সচল করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, টোল প্লাজায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। টোল প্লাজা থেকে একটু আগালেই দক্ষিণ কাজলায় ফাতেমা নাজ পেট্রোল পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি আগুনে পোড়া বাস। পাম্পের একজন নিরাপত্তাকর্মী জানালেন, এই গাড়িটি কাজলায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল সকালেই এখানে এনে রাখা হয়েছে। দক্ষিণ কাজলা থেকে শনিরআখড়ার দিকে আগাতেই দেখা যায়, সড়কের পশ্চিম পাসের এই সড়কের অধিকাংশ রোড ডিভাইডার ভাঙা। সড়ক দ্বীপের এমন ভাঙা চিত্র এই সড়কের বিভিন্ন স্থানেই দেখা গেছে। একটু এগিয়ে শনিরআখড়া আন্ডারপাস পার হতেই চোখে পড়ে পুলিশের একটি পুড়ে যাওয়া রেকারের ধ্বংসাবশেষ। এখানে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পথচারী জানান, আন্দোলন আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতে পারে। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ এমন করে ধ্বংস করা মোটেও ঠিক হয়নি। মাতুয়াইল ফুটওভার ব্রিজের একটু আগে একটি পণ্যবাহী ট্রাক্টরে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে গতকাল দুপুর পৌনে ১টায়ও। একজন পথচারী জানালেন এই ট্রাক্টরটিতে রবিবার রাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এরপর সাইনবোর্ড শান্তিধারা এলাকায় পৌঁছে দেখা যায়, সড়কেই পড়ে আছে দুটি পোড়া স্পিডবোট। সড়কে স্পিডবোট কোথা থেকে এলো জানতে চাইলে স্থানীয় একজন জানালেন, পাশেই স্পিডবোট তৈরির ফ্যাক্টরি। এখান থেকেই নিয়ে এসে শনিবার আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাইনবোর্ড পার হয়ে সানারপাড় ইউটার্নে পৌঁছলে দেখা যায় ভয়াবহ চিত্র। এখানে একসঙ্গে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি সিমেন্ট কোম্পানির পাঁচটি রেডি মিক্সার গাড়ি। পুরে যাওয়া এই গাড়িগুলো সরিয়ে নিতে কাজ করছেন কোম্পানিটির শ্রমিকরা। এবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদকের গন্তব্য সানারপাড় ইউটার্ন থেকে ঢাকামুখী। এখান থেকে একটু আগাতেই কদমতলী থানা এলাকার মুজাহিদনগরে সড়কের দক্ষিণপাশে চোখে পড়ে হানিফ পরিবহনের ঢাকা-কক্সবাজার সড়কে চলা একটি বাস। এই গাড়িটিতে আগুন দেওয়া না হলেও ভেঙে ফেলা হয়েছে সব কাচ। রায়েরবাগ পার হয়ে শনিরআখড়া আন্ডার পাসের একটু আগে দেখা যায় ঢাকা-নোয়াখালী সড়কে চলাচলকারী হিমাচল গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ঢাকা মেট্রো গ-১২-২০৮১ বাসটি। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই গাড়ির চালক সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, গাড়িটি তারা শনিবার নোয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশে এসেছিলেন। রায়েরবাগ পার হয়ে শনিরআখড়ার কাছাকাছি আসতেই তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন আন্দোলনকারীরা। যাত্রীরা তাড়াহুড়া করে নেমে গেলে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় কয়েকজন। এদিকে অনেক বেশি ঝামেলা হয়েছে শুনে দুই দিন আর আসেননি। গতকাল পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক জেনে এসেছেন বাসের ক্ষতির পরিমাণ দেখতে। একটু এগিয়ে কাজলা বাসস্ট্যান্ডেই দেখা মেলে আরও একটি পুড়ে যাওয়া বাসের। তবে এই বাসের সামনে কেউ না থাকায় ঠিক কবে আগুন দেওয়া হয়েছিল, তা জানা যায়নি।

সর্বশেষ খবর