মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

এ যেন অচেনা এক ঢাকা

জিন্নাতুন নূর

এ যেন অচেনা এক ঢাকা

রাজধানীতে ফাঁকা রাস্তায় ক্রিকেটে মেতেছে তরুণরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চলমান কারফিউ ও দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়কগুলো এখন সুনসান। সড়কে গণপরিবহন চলছে না। প্রাইভেট কারের সংখ্যাও হাতেগোনা। ইন্টারনেট না থাকায় শিশু-কিশোর ও তরুণরা পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে এখন ক্রিকেট খেলে সময় পার করছেন। বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও। পাড়ার মোড়ে মোড়ে আড্ডায় পার করছেন সময়। সড়কে যানবাহনের চাপ না থাকায় খোলা বাতাসে ঘরের বাইরে এসে সড়কের ওপর আইল্যান্ডে বসেই গল্পে মেতেছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা। বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় এলাকাবাসী বিকাল ও সন্ধ্যার দিকে ঘরের বাইরে হাঁটতে বের হচ্ছেন। কেউ বা পরিবার নিয়ে প্রতিবেশীর বাসায় যাচ্ছেন। গত কয়েক দিনে ইট-কাঠের ঢাকা নগরীর এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে এ যেন অচেনা এক ঢাকা।

গতকাল বিকালে মিরপুর কালশী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একদল কিশোর ও তরুণ প্রধান সড়কের ওপর ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রমিজ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলে, ‘গত কয়েক দিন ধরে স্কুল বন্ধ। ইন্টারনেটও নেই। তাই খালি সড়ক পেয়ে বন্ধুরা ক্রিকেট খেলছি।’ শুধু মিরপুরই নয়, গ্রিনরোড, কলাবাগানসহ ঢাকার আরও বিভিন্ন এলাকায় শিশু-কিশোরদের দিনেরাতে ক্রিকেট খেলতে দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যায় কালশী ফ্লাইওভারের ওপর আশপাশের এলাকাবাসীকে হাঁটতে দেখা যায়। এদের কেউ কেউ আবার সেলফিও তুলছিলেন। ফ্লাইওভারে আসা এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শিপন মাহবুব বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির কারণে গত কয়েক দিন একপ্রকার গৃহবন্দি ছিলাম। আজ পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে একটু হাঁটতে বের হয়েছি।’

মিরপুর পল্লবী আবাসিক এলাকায় দিনের বেলা মানুষজন ঘরের বাইরে তেমন বের না হলেও সন্ধ্যা হতেই ঘরের বাইরে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাঁটতে বের হচ্ছেন। এদের কেউ কেউ যাচ্ছেন তাদের প্রতিবেশী ও এলাকায় থাকা নিকট আত্মীয়ের বাসায়। কথা হলে পল্লবীর এক বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা শাকিলা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত কয়েক দিন কর্মস্থলে ছুটি থাকায় এবং চলমান পরিস্থিতির কারণে দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ না থাকায় এখন সন্ধ্যা হলেই ছেলেমেয়েকে নিয়ে এলাকায় হাঁটতে বের হই। আবার বোনের বাসা একই এলাকাতে হওয়ায় সেখানে গিয়েও কিছুটা সময় কাটাচ্ছি।’ ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের রাতের দিকে পাড়ার মোড়ে মোড়ে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে। নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সীদের মিরপুরের কালশী রোড, ধানমন্ডি কলাবাগান এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ডের ওপর বসে গল্প করতে দেখা যায়।

কল্যাণপুরের কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থী আরিয়ান হোসেন। কারফিউয়ের সময়ে ইন্টারনেট ছাড়া গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বন্ধুদের নিয়ে তাদের বাসার ছাদে ক্যারম খেলছেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আগের মতো বন্ধুদের নিয়ে খেলার সুযোগ হয় না। করোনায় ইন্টারনেট থাকলেও এবার পাঁচ দিন ধরে তা না থাকায় বন্ধুরা মিলে ক্যারম খেলে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গণপরিবহন না থাকায় এই কয়েক দিনে যাতায়াতের জন্য নগরবাসীর ভরসা ছিল রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ঢাকার ফ্লাইওভারগুলোতে এই কয়েক দিন রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলতে দেখা গিয়েছে। তবে গ্যাস-বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ায় বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গ্যাস না থাকায় অনেকেই রেস্টুরেন্টে ভিড় করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর