মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিমানবন্দরে যাত্রীর ভিড় চলছে দেশি-বিদেশি ফ্লাইট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমানবন্দরে যাত্রীর ভিড় চলছে দেশি-বিদেশি ফ্লাইট

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। গত দুই দিনে কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি। গতকালও ছেড়েছে ১৪৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। সচল আছে সবকটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। চলমান কারফিউ এবং ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে ফ্লাইট যাতে হাতছাড়া না হয় তার আগেভাগেই বিমানবন্দরে আসতে সড়কে নানা ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ করেছেন বিমানযাত্রীরা। তবে গতকাল শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ যাত্রীই তাদের ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছেন। অনেকের স্বজনরাও এসেছেন সঙ্গে। টার্মিনালের সামনে বিছানা পেতে তারা অপেক্ষা করছেন ফ্লাইটের।

 বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালের সামনে অপেক্ষা করছিলেন নরসিংদীর সিকদারপাড়ার মোহাম্মদ রাকিব। তিনি তার ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৮ ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছেন। এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। গত মার্চে দেশে এসেছিলেন ছুটিতে। নরসিংদী থেকে ঢাকা আসতে লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। তার ফ্লাইটের নির্ধারিত সময় গতকাল রাত ১২টা। কিন্তু তিনি সকাল ৮টায় বিমানবন্দরে এসে উপস্থিত হয়েছেন। কারণ চলমান পরিস্থিতিতে রাস্তায় গাড়ি নেই, এর মধ্যে এয়ারলাইনসে যোগাযোগ করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগও নেই। তাই অজানা আশঙ্কায় এ ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাকিব বলেন, আসার সময় কয়েকটি চেকপোস্টে আমাকে আটকে দিয়েছিল। পরে পাসপোর্ট এবং ফ্লাইটের টিকিট দেখালে ছেড়ে দেয়। এর আগে কুড়িলে ফুটপাতে কথা হয় আরমান নামে এক পথচারীর সঙ্গে। তিনিও সৌদিপ্রবাসী। বাড়ি ঢাকার দোহারে। যানবাহন সংকটে পিঠে এবং হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে হেঁটে ছুটছিলেন। তার ভাষ্য, নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ধরতে পারব কি না, আর ফ্লাইটও বাতিল হয় কি না-কোনো কিছুই আমরা বলতে পারছি না। তবে রাস্তায় যে পরিস্থিতি তাই হেঁটেই হাতে অনেক সময় নিয়ে রওনা হয়েছি। বাকিটা আল্লাহ ভালো জানেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের ১ ও ২ নম্বর টার্মিনালের সামনে শত শত যাত্রী ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ টার্মিনাল ওয়াকওয়েতে বিছানা পেতে ঘুমাচ্ছেন। কেউ ট্রলিতে বসে একে অন্যের সঙ্গে গল্প করে সময় পার করছেন। কেউ আবার নিচে বসে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। সবার চোখে ক্লান্তির ছাপ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, গতকাল দুপুরে ১১ জন যাত্রী নিয়ে শাহজালালে অবতরণ করে হজের শেষ ফ্লাইট। ফিরতি যাত্রায় তাদের ১২৩টি ফ্লাইটে প্রায় ৪০ হাজার হজযাত্রী দেশে ফিরেছেন। গতকাল বিকার সোয়া ৩টায় বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ও দেশের পরিস্থিতির কারণে বিমানযাত্রীরা একটু কষ্টে আছে। বাংলাদেশে আমাদের প্রতিটি বিমানবন্দর সচল আছে। দুই দিন ধরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতির বিমানবন্দরসহ যে কটি আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে সবকটিতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সময়মতো ছেড়েছে। দু-একটি বিশেষ কারণে ডিলে হতে পারে। এর আগে কিছু ক্যানসেলেশন হয়েছিল এবং এ ক্যানসেলেশন মাইক্রোসফটের একটি সফটওয়্যারের কারণে ও ইন্টারনেটব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় হয়েছিল। তবে এখন সব প্লেন সময়মতো ছাড়ছে। এ ছাড়া কিছু সমস্যা হয়েছিল। সেগুলো আমরা অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করেছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফ্লাইট ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ মুহূর্তে আমরা সব এয়ারলাইনসকে নির্দেশনা দিয়েছি-যদি কেউ ভাড়া বাড়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ভাড়া বাড়ানোর কতগুলো পদ্ধতি আছে, সিস্টেমের মধ্যে থেকে যা করার, করতে হবে। সিস্টেমের বাইরে কোনো কিছু করা যাবে না। কেউ যদি অযাচিতভাবে ভাড়া বাড়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অন্য প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু যাত্রী আগেই চলে আসতে পারে। যারা আগেই চলে আসছে তাদের এখানে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আজও (গতকাল) ৫০০ লোককে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। হজ ক্যাম্প এবং কাওলাতে প্রবাসী রেস্ট হাউসেও তাদের থাকার ব্যবস্থা আছে। গত তিন দিনে কোনো ক্যানসেলেশন নেই, তিন দিনের আগে ক্যানসেলেশন ছিল। আর এটা হয়েছিল মাইক্রোসফটের একটা গ্লিজের কারণে। বিশেষ করে সৌদি এয়ারলাইনসের চারটি ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছিল। ওই ফ্লাইটগুলোর ১২-১৩ শ যাত্রী আটকা পড়ে। সাউদি অ্যারাবিয়া বেশি করে ফ্লাইট পাঠাচ্ছে এবং তাদের নিয়ে যাচ্ছে। তারা যদি চায় তাহলে বাংলাদেশ বিমানও বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে সাহায্য করবে। আমি আশা করি আগামী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ছাড়া আরেকটি সমস্যা আছে, সেটা ভিসা। ভিসার ব্যাপারে ইতোমধ্যে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। মাননীয় মন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সাউদি অ্যারাবিয়ায় রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন, আপাতত যে এজেন্সির মাধ্যমে যারা যাচ্ছে, সেই এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে। আমরা চেষ্টা করছি সব ভিসার মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানোর জন্য। যদি এটা হয় তাহলে সবার সমস্যার সমাধান হবে। আর আমাদের কোনো বিমানবন্দরে নিরাপত্তা হুমকি নেই।’ বিমানযাত্রীদের বিকল্প থাকার ব্যবস্থা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিমানযাত্রীদের থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নেই। কারণ তিন দিন আগে কিংবা চার দিন আগে যে সমস্যা হয়েছিল তা এখন আর নেই। আর ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও ম্যানুয়ালি কাজ করা হচ্ছে।’

 

সর্বশেষ খবর