মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

আত্মসমর্পণ করতে চায় অনেকে

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নরসিংদী কারাগার

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

অবশেষে তিন দিন পর নরসিংদীর অরক্ষিত কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল সকাল থেকে কারাগারের ভিতর সর্বসাধারণের অবাধ প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে কারাগারের আশপাশে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের কাজও শুরু করা হয়েছে। এদিকে জঙ্গি হামলার সময় জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া হাজতি-কয়েদিদের অনেকেই এখন আত্মসমর্পণ করতে চায় বলে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে কারাগারের প্রধান ফটক মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের সুরক্ষা বিভাগ থেকে পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কারাগারের আশপাশে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস বর্বরোচিত হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে ধংসস্তূপে পরিণত হয় নরসিংদী জেলা কারাগার। স্বাধীনতা পূর্ববতী বা পরবর্তীতে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার বিকালে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায় কয়েক হাজার দুর্বৃত্ত। তারা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে জেল সুপার, জেলারের অফিস কক্ষ, পুলিশ ব্যারাকসহ পুরো জেলখানায় তা-ব চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র, গুলি ও খাবার লুট করে নেয়। ওই সময় জেলে থাকা আনসারুল্লাহ বাংলা ভাই জঙ্গি সংগঠনের ৯ সদস্যসহ ৮২৬ জন আসামিকে ছিনিয়ে নেয় তারা। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসলীলা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। আগুনে কারাগারের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় জেলা কারাগারের জেলার কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এদিকে জেলা কারাগার থেকে পলায়নকারী সব কারাবন্দিকে কারাগার বা নিকটস্থ থানায় এসে অবিলম্বে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলাম। গতকাল সকালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ও শহরজুড়ে মাইকিং করে সর্বসাধাররণকে এ তথ্য জানানো হয়। জানা গেছে, এই ঘোষণার পর বেশ কিছু কয়েদি ও হাজতি আসামি কারাগারের আশপাশে গতকাল ঘোরাঘুরি করেছে। বেশ কিছু আসামি ফিরে এসে কারাগারটির ভিতরে থাকার ব্যবস্থা না পেয়ে আবার চলে যায়। তবে আইনকে সম্মান জানিয়ে অনেক সাধারণ আসামিই কারাগারে আসতে চায় বলে জানিয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, কারাগার থেকে লুট হওয়া ২০টি অস্ত্র, ১ হাজার ৮৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লুট হওয়া অস্ত্রের সন্ধানদাতাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে হামলার সময় জেল থেকে বের হয়ে যাওয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. কামরুজ্জামান আবার ফিরে এসে এই প্রতিবেদককে জানান, তার দুই মাসের সাজা বাকি রয়েছে। তার মতো সব হাজতি ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরা বের হয়ে গেলেও এখন তারা কারাগারে ফিরে আসতে চায়। তারা আইন মেনে কারাগারে থাকতে চান। তিনি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, বাইরে থেকে লোকজন এসে জেলখানার তালা ভাঙে। পরে তারা সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে। আমি তখন তাদের হাতে মারা পড়ার আশঙ্কা করে বের হয়ে যাই। সাজাপ্রাপ্ত আরেক কয়েদি স্বপন বলেন, ‘আমি চৌকায় কাজ করি। সব আসামিকে খাবার দিয়ে আমরা লকাপ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর ১০ মিনিটের মধ্যে হঠাৎ বিকট শব্দ। পরে বাইরের লোকজন ভিতরে ঢুকে আমাদের পিটিয়ে কারাগার থেকে বের করে দেয়। তারা কারাগারের ভিতরে আগুন লাগিয়ে দেয়। স্বপন বলেন, আমার চার বছর সাজা খাটা শেষ হয়ে গেছে। মুক্তি পাওয়ার আর অল্প বাকি আছে। এখন পালালে নতুন করে আবার সাজা খাটতে হবে। তাই পালিয়ে থাকতে চাই না।

সর্বশেষ খবর