বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কঠোর সেনা টহল তল্লাশি

সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে বিজিবি পুলিশ র‌্যাব ও আনসার

নিজস্ব প্রতিবেদক

কঠোর সেনা টহল তল্লাশি

রাজধানীতে সেনাবাহিনীর টহল -জয়ীতা রায়

কারফিউর চতুর্থ দিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর কঠোর টহল দেখা গেছে। এ ছাড়া পথে পথে ছিল তল্লাশি। এদিন দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা কারফিউ ছিল শিথিল। এ সময়েও রাস্তায় চলাচলকারীদের মধ্যে সন্দেহভাজন যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি দেহ তল্লাশি করা হয়। চলমান পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিহত করতে রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের কঠোর অবস্থান থাকবে।

গতকাল সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বসানো হয় সেনা চেকপোস্ট। রাস্তায় কাউকে সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি দেখা হয় পরিচয়পত্র বা কারফিউ পাস। এমন পরিস্থিতে গতকাল রাজধানীতে অল্প কিছু সরকারি গাড়ি ও ব্যক্তিগত যান ছাড়া রাস্তায় তেমন কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। অলিগলিতে খোলা থাকলেও মূল সড়কের পাশের দোকানপাট ছিল বন্ধ।

ঢাকার বাইরেও রাস্তাঘাট ছিল অনেকটা সুনসান। তবে কারফিউর আওতামুক্ত ছিল অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যমের গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি। কয়েক দিনের ভয়াবহ তা-বের পর সড়কে সেনাসদস্যদের অবস্থানে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকটাই স্বস্তি দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদেরও চেকপোস্ট পরিচালনা করতে দেখা যায়। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সবচেয়ে বেশি সংঘাত-সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায়। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে গত বুধবার থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবেশপথে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সেনা ও পুলিশের উপস্থিতে এখন ওই এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর-১০ ও ১৪, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বিজয়সরণি, রামপুরা, নতুনবাজার, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, বিজয়নগর, উত্তরা, মগবাজার, শ্যামলী, আজিমপুর ও মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র সেনা সদস্যদের টহল ও চেকপোস্ট বসাতে দেখা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীরা রামপুরায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে অনুপ্রবেশ করে ভাঙচুরের পর আগুন দেয়। গতকাল সেখানকার নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশের পাশাপাশি সাঁজোয়া যানসহ সেনা উপস্থিতিও দেখা যায়। আকাশে ছিল পুলিশ ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল। নিরাপত্তাবাহিনীর কড়াকড়ি অবস্থা দেখা গেছে ভাটারা নতুন বাজারে কূটনৈতিক এলাকার প্রবেশমুখে। এখানে বিদেশগামী যাত্রী, কূটনৈতিকপাড়া সংশ্লিষ্ট কিংবা গুলশান-বারিধারার বাসিন্দা হলে পরিচয়পত্র যাচাই করে ঢুকতে দিতে দেখা যায়। বিভিন্ন অলি-গলি থেকে কোনো দুষ্কৃতকারী বের হয়ে যাতে নাশকতায় লিপ্ত হতে না পারে এজন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও সংঘাতময় এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনা সদস্যদের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাগুলোর সামনে ছিল অধিক সেনা সদস্যের উপস্থিতি। গতকাল দুপুর ১টায় কারফিউ শিথিল হলে মহাখালী এলাকায় কিছু সময়ের জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়। শিথিল সময়ে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো।

গতকাল আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলমান অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত ১৮ জুলাই থেকে কাজ করছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রেসকিউ মিশন, ফায়ার বাকেট মিশন, ট্রুপস মিশন সম্পন্ন করে এবং দ্রুততম সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আনা-নেওয়া নিশ্চিত করছে। ইতোমধ্যে নাশকতামূলক অগ্নিকান্ডে আক্রান্ত সেতুভবন, বিটিভি ভবন ও অন্যান্য স্পর্শকাতর স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রথমবারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ নৈশকালীন ফায়ার বাকেট অপারেশন পরিচালনাসহ মিরপুর বিআরটিএ এবং সাইন্সল্যাবে অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার বাকেট অপারেশন পরিচালনা করে।

এদিকে গতকাল বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন হেলিকপ্টারে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান পর্যবেক্ষণ করে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। এ ছাড়া ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর, কক্সবাজার এবং যশোর বিমানবন্দরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিমান বাহিনীর কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স এবং অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে চলমান পরিস্থিতিতে সারা দেশে কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের বিষয়টি জানানো হয়। আর কারফিউ অমান্য করলে এক বছরের কারাদন্ড ও জরিমানা করা হবে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

সর্বশেষ খবর