বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঢাল হয়ে ছিল আনসার

ক্ষয়ক্ষতি ২৫ কোটি নিহত ১, আহত ৯৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে ভয়ংকর অরাজক পরিস্থিতিতেও রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় ঢাল হয়ে ছিল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজধানীর আবুল হোটেল থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস্তূপে পরিণত হওয়া এই এলাকায় রাস্তাঘাটে রীতিমতো প্রাণের সঞ্চার করে এই বাহিনীর সদস্যরা। এতে রীতিমতো প্রশংসায় ভাসছে এই বাহিনীর সদস্যরা। আনসার সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুলিশের সহযোগী হিসেবে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হামলায় মতিঝিল এলাকায় মো. জুয়েল শেখ (২২) নামে একজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৮ জন আনসার সদস্য। দুর্বৃত্তদের হামলায় এই বাহিনীর তিনটি গাড়ি, ২০টি মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, আনসার সদস্যদের বিভিন্ন ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ফলে অন্তত ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য বদ্ধপরিকর। কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশে যে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছিল তা মোকাবিলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা শুরু থেকেই তৎপর ছিলেন। গত ১৭ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৫০ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কারফিউ জারিকালীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ৫ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাহিনীর সদস্যরা সাধারণত বিভিন্ন দুর্যোগে অন্য বাহিনীগুলোর সহযোগী শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কারণে তাদের ওপর সাধারণ মানুষের ধারণা অনেক ভালো। সবসময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে হয়তো এমনটা থাকত না। এ জন্যই তুলনামূলক ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। গত শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার রামপুরা এবং খিলগাঁও এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আনসার বাহিনীর সদস্যরা আবুল হোটেলের সামনে এবং তালতলা সড়কে তিন রাস্তার মোড়ে এলএমজি পোস্ট (বাংকার) স্থাপন করে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৪ ঘণ্টা এসএমজি (লাইট মেশিনগান) তাক করে ছিলেন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। এতে নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্থ ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা বলছেন, এলএমজি পোস্ট স্থাপনের কারণে তালতলা এবং খিলগাঁও এলাকায় দুর্বৃত্তরা বড় ধরনের নাশকতার সাহস করেনি। এর কারণে অনেকটাই নিরাপদ রয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, ১৭ জুলাই থেকেই নিরাপত্তা নিশ্চিতের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে ছিল আনসার সদস্যরা। কেবল খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় চারটি শিফটে ২০০ জন্য ফোর্স দায়িত্ব পালন করছিল ওই এলাকায়। গলি গলি ঘুরে নিয়মিত টহল দিয়েছেন সশস্ত্র আনসার সদস্যরা। এর বাইরে গত ১৭ জুলাই রাত থেকেই শাহবাগ এবং টিএসসি এলাকায় বিশেষায়িত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যরা দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত হন। তবে পুরো রাজধানীতে ৫০ প্লাটুন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য মোতায়েন করে সদর দপ্তর। এর বাইরে বিশেষ করে পুলিশের সঙ্গে ২৪০০ জন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আনসার সদর দপ্তর। গতকাল এক প্রশ্নের জবাবে আনসার বাহিনীর প্রধান বলেন, নাশকতা, আরাজকতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় কোনো সাধারণ ছাত্র জড়িত নয়। ছাত্রদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সরকার কখনোই দ্বিমত পোষণ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই ছাত্রদের প্রতি সহানূভূতিশীল ছিলেন। ছাত্রদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। বিএনপি-জামায়াত এবং স্বার্থান্বেষী মহল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। মেট্রোরেল, গুরুত্বপূর্ণ ভবন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রজেক্টগুলোতে যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এই দায়ভার তাদেরকে নিতে হবে।  চলমান নাশকতায় আনসার বাহিনীর ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবুল হোটেল থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত কী ভয়ানক পরিস্থিতি ছিল তা আপনার স্বচক্ষে দেখেছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক সদস্য আহত হয়েছেন এবং একজন নিহত হয়েছেন। সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ছাড়া ও সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে সাধারণ আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসার দিয়ে সহায়তা করছি।

সর্বশেষ খবর