শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞ ও তান্ডবলীলা চালানো হয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ১৭৯ নাগরিক। তারা বলেছেন, গত কয়েক দিনের সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বহু মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিরীহ পথচারী, ছাত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ যারা নিহত হয়েছেন, তাঁদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং আহত হয়ে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁদের সুস্থতা কামনা করছি। ছাত্রদের কোটা সংস্কারের বিষয়টি সামনে রেখে সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দেশব্যাপী সন্ত্রাসী তান্ডব ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের আমরা তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। ১৭৯ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে গতকাল রাতে গণমাধ্যমে এ বার্তা পাঠিয়েছেন কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী। বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন, সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, চিত্রশিল্পী রফিকুন্নবী, আবুল বারক আলভী, সাবেক মুখ্যসচিব আবদুল করিম, সাবেক সচিব কেএই মাসুদ সিদ্দিকী, উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত, সাবেক আইজীবী মোহাম্মদ নুরুল হুদা, ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার,  অধ্যাপক নিসার হোসেন, অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম, অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, অধ্যাপক ড. আ জ ম শফিউল আলম, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক ড. শাহেদ রানা, সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, চিত্রনায়ক আলমগীর, রিয়াজ প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই থেকে নাশকতামূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেতু ভবন, মেট্রোরেল, বিআরটিএ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডিজিটাল ডাটা সার্ভার স্টেশন, কারাগার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নবনির্মিত এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করেছে। অস্ত্র লুটসহ জঙ্গি সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। জনজীবন বিপন্ন ও দুর্বিষহ করে তুলছে এবং কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আক্রমণ ও হত্যার মাধ্যমে নিজেদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। আমরা এ ধরনের দেশবিরোধী কার্যক্রমের নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও যারা বিদেশি হস্তক্ষেপ আহ্বান করেছে তাদের নেতিবাচক ভূমিকার নিন্দা জ্ঞাপন করছি। এ গোষ্ঠীটি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন, পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ ও নাশকতা চালিয়েছে। এরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বর্তমানের এ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম।

ইতোমধ্যে কোটা সংস্কারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করায় আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে ছাত্রদের মূল দাবি পূরণ হয়েছে। এখন ছাত্রদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হওয়ার সময়। একই সঙ্গে আমাদের সবার প্রত্যাশা কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে যে সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পুনরায় অগ্নিসন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং জনজীবন বিপন্ন করেছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় এনে রাষ্ট্র, জাতীয় সম্পদ ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সামগ্রিক বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জনগণের সমর্থন নিয়ে জাতি তা দ্রুত পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা দেশবাসীকে এ ধ্বংস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।

সর্বশেষ খবর