রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতীয় গণমাধ্যমকে ইউনূস

সন্ত্রাসের মধ্যে বাস সহ্য করা যায় না

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রশ্নে নোবেলজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘লাখ লাখ বাংলাদেশি সন্ত্রাসের মধ্যে বসবাস করছে- এটা আমি সহ্য করতে পারি না।’ এ অবস্থায় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ভারতের কাছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শান্ত করার আহ্বান জানান।

ভারতের গণমাধ্যম দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান। সাক্ষাৎকারটি গত ২৬ জুলাই প্রকাশ করা হয়। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তিনি এ সাক্ষাৎকারটি দেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ‘দ্য হিন্দু’র খ্যাতনামা কূটনৈতিক সংবাদদাতা সুহাসিনী হায়দার, যিনি ব্যক্তিগতভাবে বহুলালোচিত বিজেপি নেতা সুব্রাহ্মণিয়াম স্বামীর মেয়ে এবং ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দারের পুত্রবধূ।

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বাংলাদেশের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ভারতবিরোধী সুর বহন করার আশঙ্কা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এবং এ পরিস্থিতিতে আমি বিশ্বনেতাদের কাছে এই হত্যাকান্ড বন্ধ করা যায় কি না- তা দেখার জন্য আবেদন করছি।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘গণতন্ত্র মানুষের জীবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। গণতন্ত্র হলো- ধর্ম, রাজনৈতিক মতামত বা মতের অন্য কোনো পার্থক্য নির্বিশেষে মানুষকে, সব মানুষকে রক্ষা করা। কোনো নাগরিক যদি অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করতে চায়, তাহলে রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব হলো আক্রমণের শিকার ব্যক্তিকে রক্ষা করা। আক্রমণকারীকে হত্যা করা সর্বশেষ বিকল্প, প্রথম বিকল্প নয়, আর বাংলাদেশ সরকার শেষ বিকল্পেই সাড়া দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কাউকে হত্যা করার জন্য বাইরে বের হয়নি। তাদের দাবি সরকারের কাছে অপ্রীতিকর হতে পারে, কিন্তু এটি সরকারকে তাদের হত্যা করার জন্য গুলি করার সুযোগ দেয় না।’

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা হলো- নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছে। এটা খুবই অদ্ভুত পরিস্থিতি। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীকে আনতে হবে কেন?’ কোটা আন্দোলনের মধ্যে ভারতবিরোধী অবস্থান থাকা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি চিন্তা করাটা কল্পনাকে অনেক দূরে প্রসারিত করা হবে। কোটা আন্দোলনের সামান্যতম ছোঁয়াও নেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে। সমস্যা হলো গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের ভূমিকা। জনগণের মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে এবং তাদের মতামতের জন্য তাদের হত্যা করার অধিকার সরকারের নেই।’ ‘বিক্ষোভকারীরা হিংস্র হয়ে পুলিশ পোস্টসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, সে হামলা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে’- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘যারা আইন ভঙ্গ করেন তাদের মোকাবিলা করার একটি পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু তা না করে এলোমেলোভাবে হত্যা করা হবে? আমরা দেখেছি পুলিশ নিরপরাধ ছাত্রদের প্রতি হাত তুলে গুলি করছে এবং খুব কাছ থেকে গুলি করছে, কারণ তাদের গুলি করার ক্ষমতা আছে। এটাই আমরা দেখতে পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘যদি বিক্ষোভকারীরা উচ্ছৃঙ্খল হয় তবে এই ধরনের পরিস্থিতি পরিচালনা করার জন্য অনুসরণীয় পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের চর্চায় মারাত্মক কিছু ভুল আছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগসহ তাদের দাবির তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। এগুলো ছাত্রদের দাবি এবং পদ্ধতিটি হলো- সরকারের সেই জিনিসগুলোতে সাড়া দেওয়া। কিন্তু তারা যেভাবে কাজ করেছে সেটি কাক্সিক্ষত নয়। তিনি বলেন, ‘জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের, মানুষ হত্যা নয়। আপনি কাউকে তুলে নিতে পারবেন না, কোনো ব্যক্তি বিরোধী দলের সদস্য বলে তাকে গ্রেফতার করা হবে তা হতে পারে না। সরকার তাকে কাল্পনিক অপরাধে অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করতে পারে। এ জন্য তাকে জেলে থাকতে হবে। এটা আইনের শাসন নয়। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কিছু পদ্ধতি অবশ্যই থাকতে হবে।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস তার ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, ‘আমি গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করছি, আমি এই মুহূর্তে এই ভূমিকাই পালন করছি।’ তিনি আরেকটি নির্বাচন দাবির প্রশ্নে বলেন, ‘নির্বাচনই সব রাজনৈতিক সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান। যখন কিছু কাজ করে না, আপনি লোকদের কাছে ফিরে যান তাদের নির্দেশনা চাইতে। তারাই দেশের চূড়ান্ত মালিক। নিশ্চিত করুন যে, এটি একটি সত্যিকারের নির্বাচন হবে, জাদুকরের নির্বাচন নয়।’

সর্বশেষ খবর