মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কারফিউ টহল তল্লাশি অব্যাহত

জীবনযাপনে ফিরছে কর্মচাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারফিউ টহল তল্লাশি অব্যাহত

রাজধানীতে গতকাল বিজিবির টহল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতির দশম দিনে গতকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও বড় কোনো সহিংসতার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে এবং দেশের কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার্থীদের মাঠে নামার তথ্য পাওয়া গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় ছিল তীব্র যানজট। যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোয়। অন্য দিনের তুলনায় গতকাল সড়কে গণপরিবহনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ট্রেন চলাচল এখনো শুরু না করলেও দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় এখনো পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়নি কারফিউ। জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। কাউকে সন্দেহ হলেই চালানো হচ্ছে তল্লাশি। জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসায় কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ছে জেলায় জেলায়। নতুন সপ্তাহের প্রথম তিন কর্মদিবসে (রবি থেকে মঙ্গল) অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায়ও কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান শনিবার রাতে রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাওয়ায় কারফিউ আরেকটু শিথিল করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর ও জেলা, গাজীপুর মহানগর ও জেলা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্যান্য জেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেবেন। একটা পর্যায়ে জনগণের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে আমরা কারফিউ তুলে নেব। দিনের প্রায় পুরো সময় কারফিউ শিথিল থাকায় গতকাল ভোর থেকেই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে রাজধানী। অলিগলি থেকে মূল সড়কের পাশের দোকানপাট, অফিস, কারখানা খুলে যায়। সরকার এ তিন দিন দেশের সব সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করলেও দীর্ঘদিনের কাজের ঘাটতি পূরণে কিছুটা আগেভাগেই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে রাজধানী। বিশেষ করে অনেক বেসরকারি অফিস, কারখানা ৮টার মধ্যেই চালু হয়ে যায়। নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ থাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ পড়ে সড়কে। ফলে গতকাল দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিল যানজট। তবে পুনরায় কারফিউ শুরু হওয়ায় সন্ধ্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও স্থাপনার সামনে অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী। এ সময় পথচারী ও যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী এক দিনের শোক পালন করা হবে। এ কর্মসূচি উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন এবং মসজিদে দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় থাকবে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষনা দিলেও গতকাল কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন। গতকাল রাজধানীর মিরপুর, ইসিবি চত্বর, সায়েন্সল্যাবে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়। উল্লেখ্য, ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি এবং একের পর এক রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটে। পরদিনও সহিংসতা এবং প্রাণহানি চলতে থাকায় সেদিন মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়, সারা দেশে মোতায়েন করা হয় সেনা সদস্যদের। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কারফিউ শিথিলের মেয়াদ ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে অফিস চালু হয়।

সর্বশেষ খবর