বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

চলছে ব্লক রেইড গ্রেপ্তার

♦ ঢাকায় ২৭২ মামলায় গ্রেপ্তার ২৯৫৭ ♦ এবি পার্টির মঞ্জু পাঁচ দিনের রিমান্ডে ♦ চট্টগ্রামে ৩৪ মামলায় গ্রেপ্তার ৯৮৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলছে ব্লক রেইড গ্রেপ্তার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, সংঘাত, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের নাশতকার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে রাজধানী ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, মেস, আবাসিক হোটেল, হামলাকারীদের গোপন আস্তানা টার্গেট করে ব্লক ও টার্গেট রেইড চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল জানিয়েছে, ঢাকায় এখন পর্যন্ত ২৭২টি মামলায় ২ হাজার ৯৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয় ৫৯ জনকে। নতুন মামলা হয়েছে ৭টি। এদিকে র‌্যাব জানায়, সাম্প্রতিক নাশকতার অভিযোগে সারা দেশে ৩৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। আদালত সূত্র জানিয়েছে, গতকাল কোটা আন্দোলনে নাশকতার বিভিন্ন মামলায় আরও ৭৮ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে ডিএমপি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া আসামিদের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯৬৯ জনে। এর মধ্যে অন্তত কয়েক শ আসামি বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড ভোগ করেন। এদিকে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব ও সাবেক জামায়াত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ধানমন্ডি থানার নাশকতার মামলায় গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন। জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মী। সারা দেশে মামলা প্রায় ৭ শতাধিক এবং গ্রেপ্তারের সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজারের কাছাকাছি। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির আট বিভাগের বিভিন্ন থানায় ৫৩টি হত্যা মামলাসহ নাশকতা ও ভাঙচুরের অভিযোগে এসব মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে পুলিশ বাদী মামলার সংখ্যাই বেশি। রমনা বিভাগে ৪১টি, লালবাগে ১৭টি, ওয়ারীতে ৫১টি, মতিঝিলে ৩৮টি, তেজগাঁওয়ে ৩০টি, মিরপুরে ২৫টি, গুলশানে ৩৮টি ও উত্তরায় ৩০টি মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা ওয়ারী বিভাগে ৫১টি। আর কম লালবাগে ১৭টি। সবচেয়ে বেশি মামলা যাত্রাবাড়ী থানায়, অন্তত ৩৭টি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন গত ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। পরদিন থেকে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেশি ঘটেছে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে। রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ প্রায় পুরো রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনার পর মামলা ও গ্রেপ্তারও বেশি হচ্ছে রাজধানী ও এর চারপাশে। ২১ জুলাই রাত থেকে রাজধানীতে চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র‌্যাব। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযানে ‘ব্লক রেইড’ দেওয়া হচ্ছে। সহিংসতায় কারা জড়িত ছিলেন, তা বের করতে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে তালিকাও করা হয়েছে।

সেতু ভবনে হামলার মামলায় ব্যবসায়ী ডেভিডের জামিন : রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল হাসানাত ডেভিডের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। ২৫ জুলাই তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর আগে ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর বারিধারা থেকে তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

চট্টগ্রামে ৩৪ মামলায় গ্রেপ্তার ৯৮৩ : নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নতুন করে নগরের কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন থানায় মোট ২৩টি মামলা ও চট্টগ্রাম জেলার থানাগুলোতে ১১টিসহ মোট ৩৪টি মামলা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই রাত থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৮৩ জনকে। এর মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী।  জানা যায়, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গত ১৬ জুলাই বিকালে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর এলাকায় তিনজন ও গত ১৮ জুলাই চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাটে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। এদিন বহদ্দারহাট সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ চবি শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া গত ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনে হত্যা, দাঙ্গা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নাশকতার ঘটনায় মোট ২৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনসহ মোট ৫৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় ১১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনসহ মোট ৪০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শেরপুর প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় দুই মামলার একটিতে ১৮ জনকে এক দিন করে ও অপর মামলায় ৯ জনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন শেরপুর আদালতের সিনিয়র বিচারক ইকবাল হোসেন। এখন পর্যন্ত শেরপুরে মোট ছয়টি মামলায় গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১৪ জনকে।

সর্বশেষ খবর