শিরোনাম
শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ফ্রি ভিপিএনে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে ব্যক্তিগত তথ্য

শামীম আহমেদ

ইন্টারনেটে নিজের পরিচয় আড়াল রেখে নিষিদ্ধ জগতে বিচরণ করতে দেশে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক)-এর ব্যবহার পুরনো। কখনো পর্নো সাইটে ঢু মারতে, কখনো নিষিদ্ধ ভার্চুয়াল গেম বা অনলাইনে জুয়া খেলতে, কখনো আবার ডিজিটাল প্রতারণা করতে ভিপিএন ব্যবহার করেন অনেকে। তবে সম্প্রতি কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে ফেসবুকসহ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া ও যোগাযোগ অ্যাপ বন্ধের পর ভিপিএন ব্যবহার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ ব্যবহারকারী ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করছেন, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মাধ্যমে তারা নিজের অজান্তেই ডিভাইসটির নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছেন হাজার মাইল দূরে থাকা অন্য কারও হাতে। এতে হ্যাকিং ঝুঁকিতে পড়তে পারে ব্যক্তির গোপনীয় অনেক তথ্য, পাসওয়ার্ড, ব্যাংকিং লেনদেন, ক্রেডিট কার্ড বা স্পর্শকাতর তথ্য।

কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই রাত থেকে ৩১ জুলাই দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম। ভিপিএনমেন্টরের তথ্য বলছে, ২২ জুলাই থেকে বাংলাদেশে ভিপিএনের ব্যবহার খুবই দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ২৫ জুলাই তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ে ৫ হাজার ১৬ শতাংশ। ফলে দেশে তখন ফেসবুক বন্ধ থাকলেও ছবি-ভিডিও আপলোড বা স্ট্যাটাস দেওয়া থেমে থাকেনি।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো বিভাগের প্রধান জয়দেব কুমার মৃধা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষই ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেউ যখন ভিপিএন ব্যবহার করে তখন ওই ভিপিএন কোম্পানি ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড এনক্রিপশন করে মাঝে একটা মিডলওয়্যার বসিয়ে পাসওয়ার্ড দেখে নিতে পারে। ফ্রেন্ডলিস্ট দেখে নেয়, কন্টাক্ট লিস্ট নিয়ে নেয়। ফ্রি ভিপিএনে মূলত এগুলোই হয়। তাদের মূল টার্গেট থাকে ব্যবহারকারীর ব্যাংকিং বা ফিন্যান্সিয়াল তথ্যের দিকে। এটা বুঝতে হবে একটা প্রতিষ্ঠান শ্রম ও অর্থ খরচ করে বানানো একটি সেবা কেন ফ্রি ব্যবহার করতে দেবে? ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করে গ্রাহক নিজের অজান্তেই ব্যক্তিগত তথ্য সাইবার হামলাকারীদের কাছে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। ১৫০টি ভিপিএন অ্যাপ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ৯৯টি ইনস্টলের সময় অপ্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য অনুমতি চায়। ৩৮টি ভিপিএন অবস্থানগত তথ্য আর ৫৭টি ব্যক্তিগত তথ্য চায়। এ ছাড়া ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, বার্তা পড়ার অনুমতিও চায় এসব অ্যাপ। ভিপিএন অ্যাপের এসব তথ্য চাওয়া সন্দেহজনক। গুগল প্লে স্টোরের ১৫০টি জনপ্রিয় ভিপিএনের ২৫ শতাংশের বেশি অ্যাপের বিরুদ্ধে তথ্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। পেইড ভিপিএনেও ঝুঁকি রয়েছে। তবে যেহেতু এটা তাদের ব্যবসা, তাই বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। তবে সব ক্ষেত্রে এটা না-ও করতে পারে।

এদিকে আইসিআইআর.ওআরজিতে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষা করে ২৮৩টি ফ্রি ভিপিএনের ৭২ শতাংশেই ট্র্যাকার পাওয়া গেছে, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও বিভিন্ন কর্মকান্ড ট্র্যাক করে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, গুগল প্লে স্টোরের ৩৮ ভাগ ফ্রি ভিপিএন অ্যাপ্লিকেশনে ম্যালওয়্যার রয়েছে, যা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এর মধ্যে সুপার ভিপিএনসহ কিছু ভিপিএনের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর ডিভাইস থেকে তথ্য চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগে একটি হ্যাকিং ফোরামে ২ কোটি ১০ লাখ ব্যবহারকারীর নাম, ইমেইল ঠিকানা, লেনদেন তথ্য, ডিভাইসের তথ্য এবং অবস্থানগত তথ্য ফাঁস করা হয়। তিনটি ভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ভিপিএন পরিষেবা থেকে তথ্যগুলো চুরি করা হয়েছিল বলে তখন সাইবার সিকিউরিটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যাকাফির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর