শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
পুলিশ কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে

রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করলেই সর্বোত্তম সেবা পাবেন জনগণ

-- নূর মোহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করলেই সর্বোত্তম সেবা পাবেন জনগণ

সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেছেন, ‘পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। তাহলেই জনগণ পুলিশের কাছ থেকে সর্বোত্তম সেবা পাবেন। আর এতে করেই আশা-ভরসা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে জনগণের কাছে ঠাঁই পাবে পুলিশ।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের অনেক থানা ও পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে আগুন। লুট করা হয়েছে অস্ত্রসহ থানায় রক্ষিত সরঞ্জাম ও নথি। অনেক পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে কি না আমার জানা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুলিশ একটা। পুলিশ ছাড়া দেশ চলতে পারে না। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই পুলিশের দরকার হয়। আর এ প্রতিষ্ঠানটি এভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো কেন? আক্রমণের শিকার হলো কেন?’ পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ গোলাগুলি করার ফলে বিক্ষোভকারী, আন্দোলনকারী, শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন। অনেকে হাত, পা ও চোখ হারিয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। আবার আন্দোলনকারী, বিক্ষোভকারী, শিক্ষার্থী বা ষড়যন্ত্রকারীরা পুলিশকে হামলা করেছে। পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। কেন এসব ঘটনা হয়েছে? এটা হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে এ একটা কারণ দৃশ্যমান।’ তিনি বলেন, আপনি যখন নিরাপত্তাহীন তখনো পুলিশকে খুঁজবেন। ডানে-বামে দেখবেন পুলিশ আছে কি না, তখনই আপনার মনে সাহস আসবে। আশা, ভরসা ও আস্থার প্রতীক খ্যাত পুলিশের জায়গাটা নষ্ট হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, হামলার পর পুলিশ ট্রমায় চলে গেছে। এত সহজে সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে নতুন আইজিপি সব পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে যোগ দিতে বলেছেন। কিন্তু অনেকে ভয়ে যোগদান করছে না। কারণ আবার যদি তারা হামলার শিকার হন- এই ভয়ে। ৫ আগস্টের ঘটনার পর ৬ আগস্ট থেকে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতিতে চলে গেছেন। এখন তারা অনেক দাবি-দাওয়া উত্থাপন করছেন। বলা হচ্ছে নিম্নস্তরের পুলিশ সদস্যরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন সময় এসেছে, এগুলোর সুরাহা করা যেতে পারে। পুলিশের মধ্যে এ বিশ্বাসটা দিতে হবে যে- আর কোনো অসুবিধা হবে না। সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, তাদের যে দাবি-দাওয়াগুলো সামনে আসছে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মেনে নেওয়া হবে। পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে তাদের মনে যে ভয় ঢুকেছে সেটা কেটে যাবে, কাজ করতে পারবে। তিনি উল্লেখ করেন, ভাঙচুর করে, আগুনে পুড়িয়ে, অস্ত্র লুট করে থানা ধ্বংস করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি থানা ক্ষতিগ্রস্ত। থানায় কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে পুলিশ সদস্যরা থানায় বসতে পারবে, কাজ করতে পারবে। প্রথম কাজটাই হলো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা। অপরাধ দমন নিয়ন্ত্রণের যে কাজগুলো পুলিশ করত সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা। কেবলমাত্র জুনিয়র অফিসার নয়, পুলিশের সিনিয়র অফিসাররাও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলেন। ফলে তাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে সময় দিতে হবে। আশা করছি আগামী ৫/৭ দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তখন থানার গতিতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। সাবেক আইজিপি আরও বলেন, ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক দল পুলিশকে একটানা ব্যবহার করেছে। আগে কখনো এমনটি হয়নি। রাজনৈতিক দলটি লম্বা সময় থাকার কারণে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে ক্যাডার বাহিনী তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তারা জনসম্পৃক্ততা বাদ দিয়ে যখন-তখন খবরদারি করত, কোনো অর্ডার ছাড়াই গুলি চালাত। এটা ভয়ংকর একটা প্রবণতা। জনগণকে নিয়েই পুলিশের কাজ। অযোগ্যদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান বানিয়েছে। ফলে পুলিশে পুনঃসংস্কার লাগবে। পুলিশ যত বেশি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে ততবেশি ভালো করবে। থানায় থানায় ওপেন হাউস ডেসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জনগণের কথা শুনতে হবে। তাহলেই পুলিশ আশা, ভরসা, নির্ভরতা, বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হিসেবে জনগণের কাছে আবির্ভূত হবে।

সর্বশেষ খবর