সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মবিরতি

সরকারের দ্বারে দাবি নিয়ে নানা পেশার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দায়িত্ব গ্রহণের পর বৈষম্য দূর ও রাষ্ট্রকাঠামোয় সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৈষম্য দূরের আশা        নিয়ে এরই মধ্যে নতুন এ  সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন গার্মেন্ট         শ্রমিক, আনসার বাহিনী, অভিভাবক সমাজ, রেলওয়ে নিরাপত্তা        বাহিনী, বেবিচক কর্মচারী ফোরাম, টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও  শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের কেউ বিক্ষোভ করেছেন রাস্তায়, কেউ করেছেন মানববন্ধন, কেউ স্মারকলিপি দিয়েছেন সরকারের কাছে।

চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ : চাকরি স্থায়ী করার এক দফা দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ আনসার সদস্যরা। এ দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে গতকাল বিক্ষোভ করেন তারা। বেলা সোয়া ১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে মৎস্যভবন থেকে প্রেস ক্লাব এবং হাই কোর্ট থেকে মৎস্যভবনমুখী রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে একই দাবিতে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রায় ৩০০ আনসার সদস্য সমাবেশ করেন। এ সময় চাকরি স্থায়ী করতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা। আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা বলেন, আর চুক্তি নয়, এবার মুক্তি চাই। আমাদের তিন বছর পর পর চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া হয়। তখন প্রায় ৬-৭ মাস অলস বসে থাকতে হয়। অবসরে গেলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না।

পোশাকশ্রমিকদের ১১ দফা : শ্রমিক স্বার্থের পক্ষের প্রকৃত প্রতিনিধি নিয়ে নিম্নতম মজুরি বোর্ড নতুন করে গঠনসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে পোশাকশ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পোশাকশ্রমিকের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ গার্মেন্টস শ্রমিক শুভ শীল ও ছয় শ্রমিকসহ সব হত্যাকান্ডের বিচার করা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ; ২০২৩ সালে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে চার শ্রমিক হত্যার বিচার ও শ্রমিকদের ওপর করা দমনমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার; নিম্নতম মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন ও ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা মজুরি পুনর্বিবেচনা করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ; সব কারখানায় যৌন নিপীড়নবিরোধী অভিযোগ সেল গঠন; পোশাকশ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের রেশন দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।

শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনের দাবি অভিভাবকদের : শিক্ষা কারিকুলাম ২০২১ বাতিলের দাবিতে গতকাল সকালে এনসিটিবির সামনে অবস্থান করেন অভিভাবকরা। অবস্থান কর্মসূচিতে সচেতন অভিভাবক সমাজের আহ্বায়ক আইনজীবী মো. আবু মুসলিম বিন হাইয়ের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শিশির আহ্বায়ক রাখাল রাহা, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সরোয়ার জাহান, ডা. মাহমুদা মিতুসহ শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বক্তারা বলেন, ২০২৩ সাল থেকে এ দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন কারিকুলাম চালু হয়েছে। এই কারিকুলাম এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। চোখের সামনে ছেলেমেয়েদের বিপন্ন ভবিষ্যৎ দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে অভিভাবকরা শুরু থেকেই কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু, কেউ কর্ণপাত করেনি। স্বৈরাচারের পতন ঘটলেও সেই কারিকুলাম এখনো বাতিল করা হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অবিলম্বে এই জ্ঞান, শিক্ষা ও মনুষ্যত্ববিরোধী শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি জানাই।

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের স্যার-ম্যাডাম সম্বোধন চান বেবিচক কর্মচারীরা : রেমিট্যান্স যোদ্ধা ও বিমানবন্দরের যাত্রীদের ‘স্যার’, ‘ম্যাডাম’ সম্বোধন করার আদেশ চান বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মচারীরা। গতকাল বেবিচক কর্মচারী ফোরাম এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন বেবিচক চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মোহাম্মদ সোহেল কামরুজ্জামান। স্মারকলিপিতে মোট ১২টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আরও রয়েছে বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার নিমিত্তে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন, বিগত ১৬ বছরে বেবিচকের যেসব চিহ্নিত কর্মকর্তা-কর্মচারী জোটবদ্ধভাবে কর্তৃপক্ষের স্বাভাবিক কাজে বাধাদানের জন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মাধ্যমে সিভিল এভিয়েশনের বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে পত্র প্রেরণ ও তদবিরসহ কর্তৃপক্ষের কাজে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করেছে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নাম পূর্বে যা ছিল তা প্রতিস্থাপন করা, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবু সাঈদ বিমানবন্দর’ রাখা ইত্যাদি।

ইন্টারনেট-কলরেটের মূল্য কমানোর দাবি টিক্যাবের : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ইন্টারনেটের মূল্য ও কলরেট কমানোসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়ে টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক বলেন, বর্তমানে ১০০ টাকার মুঠোফোন সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের ৩৯ টাকা কর দিতে হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ও সেবার দিক দিয়ে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। ভুলে গেলে চলবে না দেশে সচল প্রায় ১৮ কোটি সিমের সিংহভাগ গ্রাহকই কিন্তু নিম্নবিত্ত। এমতাবস্থায় গ্রাহকদের স্বস্তির জন্য ইন্টারনেট ও কলরেটের কর হ্রাস, ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি, মেয়াদ শেষে অব্যবহৃত টকটাইম ও ডেটা কেটে নেওয়া বন্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর