শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

ওয়াসায় তাকসিম যুগের অবসান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওয়াসায় তাকসিম যুগের অবসান

শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন ১৫ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চেয়ার দখল করে থাকা আলোচিত চরিত্র তাকসিম এ খান। গত বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তাকসিমের মেয়াদ। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে নতুন ব্যবস্থাপনা  পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, ২০০৯ সালে ওয়াসার এমডি পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তার মেয়াদ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিমকে একই পদে দীর্ঘ সময় রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২০০৯ সালের পর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৬ বার। ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান ও মামলার সুপারিশ রয়েছে। তাকসিম এ খান, তার স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে শেখ হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। ওয়াসার আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটেছে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং তার অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে। প্রকল্পগুলোতে রয়েছে- দুর্নীতির লম্বা ফর্দ। কাজ শেষ না করেই শুধু পাইপ বসিয়ে সাভারের তেঁতুলঝড়া-ভাকুর্তা প্রকল্পের বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারকে। পদ্মা যশলদিয়া প্রকল্পেও রয়েছে নয়ছয়ের অভিযোগ। এসব অনিয়মের ঘটনা তথ্য-প্রমাণসহ গণমাধ্যমে অসংখ্যবার প্রকাশিত হলেও তাকসিমের বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিল শেখ হাসিনা সরকার। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বেড়েছে তাকসিমের বেতন। ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের মাসিক বেতন বর্তমানে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে ২ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। গতকাল বিকাল ৩টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে ‘ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলন’ ব্যানারে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। এর আগে, ওয়াসার পানি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শরবত খাওয়াতে এসে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমরা ওয়াসা ভবনে অবস্থান করছি। বিকাল পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’

সর্বশেষ খবর