শিরোনাম
শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
কোটা সংস্কার আন্দোলন

আহত আরও পাঁচ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় আহত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক আইনজীবীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- কুমিল্লা সদর উপজেলার আইনজীবী আবুল কালাম (৫৬), চুয়াডাঙ্গার রাজমিস্ত্রী উজ্জ্বল হোসেন (৩০), নোয়াখালীর দোকান কর্মচারী আসিফ (২৬), বরগুনার ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যান আল আমিন হোসেন (২৭) ও ঢাকার উত্তরায় অটোরিকশা চালক জসিম উদ্দিন সরকার (২৫)। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে তাদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত আইনজীবী আবুল কালামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে।

থাকতেন কুমিল্লা সদর উপজেলার মহিলা কলেজ রোডে। তার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে ধানমন্ডি থানার এসআই আকিব নূর উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন আবুল কালাম। কুমিল্লা সদর থানার পাশে কুমিল্লা হাইস্কুল সংলগ্ন রাস্তায় মুঘলটুলি সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তার বাহিনী আবুল কালামের ওপর হামলা করে এবং তাকে গুলি করে। ওইদিনই তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। নিহত উজ্জ্বলের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আলতাফ হোসাইন। উজ্জ্বলের স্ত্রী শিলু আক্তার জানান, পেশায় রাজমিস্ত্রী ছিলেন উজ্জ্বল। ৫ আগস্ট কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন মুক্তারপুর মোল্লাবাজারে চা পান করতে। এ সময় বাজারের একটি হার্ডওয়ারের দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সঙ্গে সঙ্গে দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে উজ্জ্বলসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত ও দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের ৬৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। গতকাল ভোরে তিনি মারা যান। নিহত আসিফের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরআলিপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মোর্শেদ আলম। তার গ্রামের প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন ও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী শাহবাগ থানার এসআই ফারুক আহমেদ জানান, আসিফ কিছুদিন আগে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে এলাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। গত ৫ আগস্ট মিছিলের সঙ্গে বেগমগঞ্জ থেকে পার্শ্ববর্তী সোনাইমুড়ি থানায় গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওইদিনই তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মারা যান।

নিহত আল আমিন হোসেনের বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামে। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন বাবু। নিহতের ছোট ভাই মো. রাসেল হোসেন জানান, বরগুনার আমতলীতে রেনেটা ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি করতেন আল আমিন। থাকতেন আমতলী শহরে। গত ৫ আগস্ট কাজ শেষে তিনি সেখানকার বাসার দ্বিতীয় তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাসার নিচ তলায় আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় তলায়। ঘুমিয়ে থাকা আল আমিনসহ তার কয়েকজন সহকর্মীর শরীরেও আগুন ধরে যায়। তখন তারা শরীরে আগুন নিয়েই ২য় তলা থেকে লাফিয়ে রাস্তায় পড়েন। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে নিয়ে যান। পরদিন ৬ আগস্ট তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের ৩৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। গতকাল ভোরে বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে তিনি মারা যান।

এদিকে, গত ৫ আগস্ট বিকালে উত্তরা-পূর্ব থানা এলাকায় কোটা সহিংসতার সময়ে গুলিতে আহত হয় অটোরিকশা চালক জসিম উদ্দিন। আশপাশের লোকজন তাকে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার তিনি মারা যান। স্ত্রী বানেছা আক্তার তার লাশ শনাক্ত করেন। শাহাবাগ থানার এসআই সেলিম শাহরিয়ার জীবন স্টালিন তার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দ উপজেলার নয়ানগরে।

সর্বশেষ খবর