সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাড়ছেই শহীদের সংখ্যা

চলে গেলেন টাঙ্গাইলের কলেজছাত্র ইমনও, ঢাকা মেডিকেলেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৬৫ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ছেই শহীদের সংখ্যা

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতনের আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। বাকি ৮৯ জন বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল এ তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে আমাদের হাসপাতালে ২ হাজার ২০০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৮৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল, যার মধ্যে এখনো ভর্তি আছেন ১৬১ জন। ভর্তি থাকা আহতদের মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন সাতজন। তাদের তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে বিভিন্ন পদমর্যাদার ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জন কনস্টেবল, ১১ জন এসআই, সাতজন এএসআই, তিনজন পরিদর্শক, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট টাউন সাব-ইন্সপেক্টর (এটিএসআই) ও একজন নায়েক রয়েছেন। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ জন নিহত হয়েছেন ৫ আগস্ট, ১৪ জন ৪ আগস্ট এবং বাকি সদস্যরা বিভিন্ন সময় নিহত হন। নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিএমপির ১৪ জন, এনায়েতপুর থানার ১৫ জন, সোনাইমুড়ী থানার দুজন, তিতাস থানার দুজন, কচুয়া থানার একজন, বানিয়াচং থানার একজন, ঢাকা এসবির একজন, নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের একজন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের একজন, কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের একজন, কসবা থানার একজন, খুলনা মহানগর পুলিশের একজন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের একজন এবং ঢাকা জেলার দুজন রয়েছেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে, ৫ আগস্ট এবং পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে পুলিশের এসব সদস্য নিহত হন। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ইউএনএইচসিআর জানায়, গত ১৬ জুলাই থেকে ১১ অগাস্টের মধ্যে সহিংসতায় বাংলাদেশে অন্তত ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কলেজছাত্র ইমনের মৃত্যু : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পেটে গুলিবিদ্ধ টাঙ্গাইলের গোপালপুরের কলেজছাত্র ইমন গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেলের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা গেছেন। ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন বাজারের মৃত জুলহাস উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয় খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন ইমন। গত ৪ আগস্ট বিকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াইতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় পেটে গুলিবিদ্ধ হন ইমন। গুরুতর আহতাবস্থায় প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে মির্জাপুর কুমুুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন স্বজনরা। জানা যায়, ক্লাস সিক্সে পড়াকালে ইমনের ভ্যানচালক বাবা মারা যান। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার চালিয়ে ছোট তিন ভাইবোনকেও স্কুলে ভর্তি করান ইমন। অত্যন্ত মেধাবী ইমন স্বপ্ন দেখতেন, একদিন সংসারের দুঃখ দূর করবেন। ইমনের মা রিনা বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেছিল ইমন। ওকে (ইমনকে) আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু কথা শোনেনি। ইমনের মামা গোপন ম ল জানান, ঢাকায় জানাজা শেষে লাশ গোপালপুরের বাড়িতে আনা হয়। পরে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর