মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে বাড়তি সতর্কতা বন্দরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এমপক্স (মাঙ্কিপক্স) ভাইরাস নিয়ে। এই সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে দেশের স্থল, নৌ, বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। এই সংক্রামক রোগ নিয়ে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে হটলাইন চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে মাঙ্কিপক্স বা এমপক্সে সংক্রমিত এক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সংক্রমিত ব্যক্তি একজন পুরুষ। বয়স ৩৩ বছর। তার দেশের বাইরে যাওয়া-আসা করার কোনো ইতিহাস নেই। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরের পর এই প্রথম ফিলিপাইনে মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত কোনো রোগী শনাক্ত হলেন। পাকিস্তানে সম্প্রতি তিনজন মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তিনজনই মধ্যপ্রাচ্য থেকে সম্প্রতি পাকিস্তানে ফিরেছেন। এ অবস্থায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করেছে। দেশে এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রবেশ চ্যানেল স্থলবন্দর, নৌবন্দর, বিমানবন্দরে সতর্কতা বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, সংক্রামক ভাইরাস মাঙ্কিপক্সের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগ। ভারত ফেরত প্রতিটি যাত্রীকে ইমিগ্রেশনে প্রবেশের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। গায়ে জ্বর কাশি কিংবা হাঁচির কোনো উপসর্গ আছে কিনা তা নিশ্চিত করে ছাড় দেওয়ার পর ইমিগ্রেশনে প্রবেশের অনুমতি মিলছে। তবে গতকাল থেকে এ পর্য্যন্ত ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে আসা কোনো যাত্রীর শরীরে মাঙ্কিপক্সের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। নতুন এই ভাইরাসজনিত সংক্রমকের ভয়ে তটস্থ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন পেশার মানুষ। ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি স্বাস্থ্যকর্মীরা একজন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে কাজ করে যাচ্ছেন।

পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসা সব যাত্রীকে যথাযথ পরীক্ষা করা হলেও ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীরা অবাধে প্রবেশ করছেন। বাংলাদেশে প্রবেশের সময় নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় কোনো স্বাস্থ্যকর্মী নেই। ফলে কোনোরকম পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই চলছে অবাধ যাতায়াত।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মরিয়ম বেগম জানান, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ভারত ফেরত প্রতিটি যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কোনো যাত্রীর শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি। এখানে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য মুখে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে এখনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে অনেকটা ঝুঁকিতে পাসপোর্টে যাতায়াতকারীসহ এই এলাকার মানুষ। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের চেকপোস্ট ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েক শ পাসপোর্ট যাত্রী বাংলাদেশ ও ভারতে আসা-যাওয়া করেন। নেপাল ও ভুটানেও ঘুরতে যান অনেকে। সকাল থেকে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক। যাত্রীরা কেউ চিকিৎসার জন্য, আবার কেউ ঘুরতে ভারতে যাচ্ছেন। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো অবাধে যাতায়াত করছে। পরীক্ষা করা হচ্ছে না ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই ট্রাকচালক ও হেলপারদের। হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আশরাফুল জানান, এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। এমপক্সের বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, মঙ্গলবার একজন চিকিৎসক দিবেন।

এই রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, গলাব্যথা, কাশি এবং ত্বকে পানিভর্তি ফোসকা। তবে এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গবিহীন থাকতে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসকুড়ি হয়, যা হাত, পা, বুক, মুখ, লিঙ্গ, অ-কোষ, ল্যাবিয়া, যোনি, মলদ্বারসহ যৌনাঙ্গের কাছাকাছি হতে পারে। ফুসকুড়ি প্রাথমিকভাবে পানিভর্তি ফোসকার মতো দেখাতে হয়। ফোসকায় ব্যথা ও চুলকানি হয়। এই রোগের লক্ষণগুলো জীবাণু সংক্রমণের সাধারণত ৩ থেকে ১৭ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে রোগীর দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা থাকলে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি যে কোনো ধরনের সংস্পর্শ বা যৌনমিলনের মাধ্যমে, ব্যবহার করা কাপড়, সুঁই বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণী শিকার করা, কাটা বা রান্না করার সময়, কম তাপমাত্রায় আক্রান্ত প্রাণীর রান্না করা মাংস খেলে এমনকি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর