মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
মার্কিন নির্বাচনে বাগযুদ্ধ

কমলা বললেন কাপুরুষ ট্রাম্প বললেন উন্মাদ

প্রতিদিন ডেস্ক

কমলা বললেন কাপুরুষ ট্রাম্প বললেন উন্মাদ

নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী একে-অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেছেন। কমলা হ্যারিস তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন ‘কাপুরুষ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বিরোধীদের হেয় করাটাই তার (ট্রাম্পের) রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, ‘অনেকেই আমাকে খারাপ ভাষা বলতে না করেন। বলেন কাউকে নির্বোধ না বলতে। কেউ কেউ বলেন, তাকে (কমলা) উন্মাদ না বলতে। কিন্তু আমি তাদের বলি, সে যে তা-ই। সে তো উন্মাদ।’ সূত্র : রয়টার্স, নিউজউইক।

খবরে বলা হয়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস পরোক্ষভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। গত রবিবার তিনি বলেছেন, আসন্ন ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী একজন ‘কাপুরুষ’।

ভোটযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য হিসেবে বিবেচিত পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনি সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে কমলা হ্যারিস এমন কথা বলেছেন। পেনসিলভানিয়ার সমাবেশে কমলার সঙ্গে তার রানিংমেট ও মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ ছিলেন। পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশ শেষ করার পর শিকাগোর উদ্দেশে রওনা দেন কমলা। শিকাগোতে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দেন। উল্লেখ্য, আগামী বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করবেন কমলা হ্যারিস।

এদিকে কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নতুন করে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেছেন ট্রাম্প। আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মূল্যস্ফীতি ডেকে আনার অভিযোগ করেন। গত শনিবার মূল্যস্ফীতি নিয়ে কথা শুরু করলেও দ্রুতই ট্রাম্প কমলা হ্যারিসের হাসি থেকে শুরু করে নানা বিষয় নিয়ে উপহাস করেন। একপর্যায়ে তিনি টাইম সাময়িকীর প্রচ্ছদে হ্যারিসের ছবির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, কমলার চেয়ে প্রচ্ছদে তাকে বেশি সুন্দর দেখায়।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও প্রচার শিবিরের পাশাপাশি রিপাবলিকান সমর্থকরাও এখন কমলার আকস্মিক উদ্দীপ্ত প্রচার নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। অনেকেই ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে তিনি কমলাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ না করেন। এতে অনেক দোদুল্যমান ভোটারের মন ঘুরে যেতে পারে। তবে ট্রাম্প কোনো কথায় কান দিচ্ছেন না।

জরিপের ফলাফল : নানা জরিপের ফল এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছর নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুই প্রার্থীকে সমর্থনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষভেদে সবচেয়ে বড় বিভাজন দেখা যেতে পারে।

এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তায় নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদে ব্যবধান বাড়ছে। বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্প বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। আবার নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বেশি পাচ্ছেন হ্যারিস। এতে জনপ্রিয়তার মোট হিসাবে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রতিক জরিপ পরিচালনা করেছে নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজ। মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন রাজ্যে ৫ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৯৭৩ জন সম্ভাব্য  ভোটারের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এতে হ্যারিস এবং ট্রাম্পের মধ্যে লিঙ্গভেদে ব্যবধান দেখা গেছে ৩৫ পয়েন্ট। জরিপটিতে ট্রাম্প পুরুষদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন, অর্থাৎ ট্রাম্প  পেয়েছেন ৫২ শতাংশ এবং হ্যারিস পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ সমর্থন। ওদিকে নারীদের মধ্যে হ্যারিস এগিয়ে রয়েছেন ২১ পয়েন্টে, অর্থাৎ হ্যারিস পেয়েছেন ৫৬ শতাংশ এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৫ শতাংশ সমর্থন।

এর আগের জাতীয় জনমত জরিপগুলোতেও দুই প্রার্থীর ক্ষেত্রে  ভোটারদের মধ্যে বড় ধরনের লিঙ্গভেদ দেখা গিয়েছিল। ২২ থেকে ২৪ জুলাইয়ে পরিচালিত টাইমস/সিয়েনা জরিপে দেখা গিয়েছিল, হ্যারিস সম্ভাব্য নারী ভোটারদের মধ্যে ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। তিনি  পেয়েছিলেন ৫৫ শতাংশ সমর্থন আর ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে ট্রাম্প পুরুষদের মধ্যে ১৭ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। তিনি  পেয়েছিলেন ৫৬ শতাংশ সমর্থন, আর হ্যারিস পেয়েছিলেন ৩৯ শতাংশ সমর্থন। অর্থাৎ দুই প্রার্থীর মধ্যে লিঙ্গভেদে ব্যবধান দাঁড়িয়েছিল ৩১ পয়েন্টে। জরিপটি চালানো হয়েছিল দেশব্যাপী ১১৪২ সম্ভাব্য ভোটারের ওপর।

দুই প্রার্থীর মধ্যে লিঙ্গভেদে সমর্থনের ব্যবধান আরও বেশি দেখা গেছে সাম্প্রতিক কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে। এ জরিপে হ্যারিস নারীদের মধ্যে ১৬ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৬ শতাংশ সমর্থন আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন ২৩ পয়েন্টে। তিনি পেয়েছেন ৬০ শতাংশ সমর্থন আর হ্যারিস পেয়েছেন ৩৭ শতাংশ সমর্থন। অর্থাৎ লিঙ্গভেদে দুজনের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৩৯ পয়েন্টে। অথচ এনবিসির তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে এনবিসি পরিচলিত বুথফেরত জরিপে তখনকার প্রার্থীদের মধ্যে লিঙ্গভেদে ব্যবধান দেখা গিয়েছিল ২৪ পয়েন্ট, আর ২০২০ সালে এই ব্যবধান দেখা গিয়েছিল ২৩ পয়েন্ট।

 

সর্বশেষ খবর