শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুলিশের শীর্ষ পদে এরই মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন পদেও পরিবর্তন আনা হয়। তবে এর পরও আবার বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। একই সঙ্গে দেশের সব রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। ১১টি জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বাধ্যতামূলক অবসরে ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এই কর্মকর্তারা হলেন- পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম, উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি সুপারনিউমারারি) মো. আনোয়ার হোসেন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মো. আসাদুজ্জামান (সিটিটিসি প্রধান)। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে তাদের অবসর দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধা পাবেন। এর আগে ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান এবং পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক আবদুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়।
সব রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারকে বদলি : মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রজ্ঞাপনে গতকাল বাংলাদেশ পুলিশের সব বিভাগের রেঞ্জ ডিআইজি ও মহানগরীর পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলামকে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনাকে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শফিউর রহমানকে রেলওয়ে পুলিশে সংযুক্ত, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমানকে নৌ-পুলিশে সংযুক্ত, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মঈনুল হককে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটে সংযুক্ত এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেনকে ট্যুরিস্ট পুলিশে সংযুক্ত করা হয়েছে।এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরী পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মো. সাইফুল ইসলামকে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত, রাজশাহী মহানগরী পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) বিপ্লব বিজয় তালুকদারকে টিঅ্যান্ডআইএমে সংযুক্ত করা হয়েছে। সিলেট মহানগরী পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মো. জাকির হোসেন খানকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) সংযুক্ত, গাজীপুর মহানগরী পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) মো. মাহবুব আলমকে রেলওয়ে পুলিশে সংযুক্ত এবং বরিশাল মহানগরী পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি) জিহাদুল কবিরকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) সংযুক্ত করা হয়েছে।
১০ জেলার পুলিশ সুপারসহ ১১ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার : পুলিশের রদবদলের অংশ হিসেবে ১০ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)সহ ১১ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানা গেছে, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ ও কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে, মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খানকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খানকে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে, মাগুরার পুলিশ সুপার মো. মশিউদ্দৌলাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে, নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলামকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে, সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডলকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেনকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে এবং পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আবদুস ছালামকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখকে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশকে দ্রুত মামলা-জিডি নেওয়ার নির্দেশ : সারা দেশের থানাগুলোকে মামলা, জিডি এবং এফআইআর দ্রুত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তদন্তে বিলম্ব না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-৩ শাখা থেকে এমন আদেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অভিযোগ ও সংবাদমাধ্যমে থানায় অভিযোগ গ্রহণে বিলম্বের খবর পাওয়া গেছে। আবার অনেক জায়গায় থানায় জিডি, এফআইআর এবং মামলা গ্রহণে অসম্মতি এবং বিলম্ব করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- জিডি, এফআইআর এবং মামলা গ্রহণে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করা যাবে না। পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে জনসাধারণের বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরিপত্রটি পুলিশ অধিদপ্তর, পুলিশ মহাপরিদর্শক, সব মেট্রোপলিটন ও ডিআইজি রেঞ্জের পুলিশ কমিশনার এবং সব পুলিশ সুপারদের বিতরণের জন্যও বলা হয়েছে।